নালিতাবাড়ীতে মাটি খুঁড়ে মাছ শিকার!

নালিতাবাড়ীতে মাটি খুঁড়ে মাছ শিকার!

টাঙ্গাইলদর্পণডটকম : “মানুষ মাডি খুইড়া স্বর্ণ পায়, আর আমরা পাই মাছ” এভাবে আত্মতৃপ্তিতেই বলছিলেন ২১ বছর বয়সী যুবক আহসান হাবিব। শুধু আহসান নয়, নূর আলী, মোকছেদুলসহ এ গ্রামের অন্তত ৫০-৬০ জন মানুষের এখন নেশায় পরিণত হয়েছে মাটি খুঁড়ে মাছ ধরা। অগ্রাহায়ন মাস থেকে পৌষ-মাঘ মাস পর্যন্ত প্রায় দুইমাস ধরে চলে বিচিত্র পদ্ধতিতে এভাবে মাটি খুঁড়ে মাছ শিকার। কেউ সকাল বেলা কেউবা দুপুরে আবার কেউবা বিকেলে কোদাল হাতে নেমে আসে মাঠে। সঙ্গে মাছ রাখার একটি পানিসহ বোতল অথবা পলিথিন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন মাটি কুপিয়ে জমি তৈরি করছে। কিন্তু কাছে গেলে দৃশ্যটা কিছুটা উপভোগ করার মতো। একটু খুঁড়লেই মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে গুতুম মাছ।

স্থানীয় ভাষায় বইট্টা মাছ বলে সবাই চিনে। দু থেকে এক ঘন্টা কোদাল মেরে একটি পরিবারের একদিনের প্রয়োজনীয় মাছ জুটে মাটি খুঁড়ে। ফলে কাজের ফাঁকে একটু অবসর পেলেই কোদাল নিয়ে মাঠে দৌড়ান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ডহরিয়াপাড়া ও পাঁচগাঁও এ দুই গ্রামের বিচিত্র মাছ শিকারীরা।

শিকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে আমন ধান কাটার পর ডহরিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক ঈঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করতে আসে শেরপুর-নালিতাবাড়ী মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত ডহরিয়াপাড়া মাঠে। এ সময় তারা কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়াখুঁড়ি শুরু করলে হঠাৎ মাটির নিচে দেখা মেলে বইট্টা মাছের। এরপর কৌতুল বেড়ে যায় তাদের। আশপাশে আরও খুঁড়তে থাকলে মাটির নিচ থেকে একে একে বইট্টা মাছ বেরুতে থাকে। বিষয়টি অল্প সময়েই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই প্রতিবছর আমন ধান কাটার পর যখন এ মাঠের পানি শুকিয়ে যায় তখন শুকনো মাটির নিচে নরম কাঁদায় লুকিয়ে থাকা বইট্টা মাছ শিকারের ধুম পড়ে এ গ্রামে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যখন মাঠ থেকে ধান কেটে নেওয়া হয় তখন পাশের দুই গ্রামের লোকেরা দল বেঁধে মাছ ধরার অভিযানে নামে। মাটি খুঁড়ে বইট্টা ও চিরকা মাছ শিকার করে।

শিকারী মোঃ নূর আলী (৪০) জানান, এক-দেড় ঘন্টায় প্রায় ৩০-৪০টি মাছ পাওয়া যায়। অপর শিকারী মুখলেছুর রহমান (২০) জানান, বর্তমানে মাটি খুঁড়ে মাছ ধরা আমাদের উৎসবে পরিণত হয়েছে।