ব্যস্ত মৌ-চাষিরা, বিক্রি লাখ টাকা

ব্যস্ত মৌ-চাষিরা, বিক্রি লাখ টাকা

বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী :  টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ইরি প্রকল্পগুলো এখন সরিষা ফুলে সমৃদ্ধ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদের সমারোহ। বন্যার পানি নেমে যাবার পর ইরি ধানের চারা রোপণের পূর্বে এখানকার জমিতে বপন করা হয় সরিষা বীজ। সরিষা গাছ বড় হবার পাশাপাশি এর মাথায় ফোটে হলুদ ফুল। আর এই ফুল মধু উৎপাদনের প্রধান উৎস। মৌ-চাষিরা সরিষা ক্ষেতে শুরু করেছে কৃত্রিম মৌ-চাষ। জানা যায়, এবার বাসাইল পৌরসভা, কাঞ্চনপুর, কাউলজানী, কলিয়া, বার্থা, নাইকানীবাড়ী, পৌলী সহ বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেতের ফাঁকা জমিতে সাড়িবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে ১ হাজার ২ শতটি  মৌ-মাছির বাক্স। দিনের বেলায় মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে মৌ সাজায়। এক সপ্তাহের মধ্যেই মধুতে ভরে ওঠে মৌচাক।

উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল হক জানান, গত সপ্তাহে উপজলোর বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ১ হাজার ২ শতটি বাক্স বসিয়ে প্রায় ১শত ২০ মণ মধু উৎপাদন করেছে মৌ-চাষিরা। এতে প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছে ৩ শত টাকা করে। ১শত ২০ মণের মধুর মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছে মৌ-চাষিরা। বাসাইল থেকে মৌ-চাষিদের এক মাসে প্রায় ৫শত মণের বেশি মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে।

মির্জাপুর থেকে আসা মৌ-চাষি আব্দুল হালিম বলেন, তার খামারে ৫০টি বা· বসানো হয়েছে। ৫০টি বা· থেকে ১৫ দিনে প্রায় ১৪ মণ মধু উৎপাদন হয়েছে। এক মাসে এখান থেকে ৩০ মণ মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি কেজি মধু পাইকারী দরে ৩ শত টাকা করে বিক্রি করেছি।

সাতক্ষিরা থেকে আসা মৌ-চাষি আবু জাবের বলেন, আমি ১শত ৫০টি বা· বসিয়েছি। আমার এক সপ্তাহে ১৫ মণ মধু উৎপাদন হয়েছে।


জানা যায়, মৌ-চাষিরা বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং যাদের মৌ-চাষে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের কোন দিন অলসতায় পায় না। মৌ-মাছির বংশ বিস্তার মধু সংগ্রহ ও ফ্রেম থেকে মোম পাওয়া যায় তা সবই বিক্রি করা যায়। যার ফলে মৌ-চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। মানের দিক থেকেও উন্নত হয়। এ মৌসুমে মধুর চাহিদাও বেশি থাকে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মধু উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য হয়। তবে মৌমাছি সংরক্ষণে অনেক সময় চাষিদের সংকটে পড়তে হয়। বিশেষ করে প্রচন্ড শীতে অনেক মাছি মারা যায়। এছাড়া রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করাও সম্ভব হয় না। এজন্যে মৌ-চাষিরা প্রাণীসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন।


এদিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান মৌ-চাষিদের মৌ-চাষে উৎসাহ দিতে তাদের সাথে দেখা করতে যান বলে জানা গেছে।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, মৌ-চাষ করলে যেমন একদিনে চাষিরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে মৌমাছি সরিষার পরাগায়ণে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। মৌমাছির মাধ্যমে সরিষার ফলনও প্রায় ২০% বেড়ে যায়।