বাধ্যতামূলক হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের নিবন্ধন

বাধ্যতামূলক হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের নিবন্ধন

বিশেষ প্রতিবেদক : জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের অবাধ অপব্যবহার বন্ধে নিবন্ধন খাতা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অধিদফতরের একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক ও দুজন ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের সমন্বয়ে গঠিত তিনটি টিম প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিনদিন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আশেপাশের ফার্মেসিতে গিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রি খাতা চালু ও তা সংরক্ষণ করার ব্যাপারে ফার্মেসি মালিকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। আপাতত শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নিবন্ধন রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ফার্মেসিগুলোতে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট রাখার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিভাবে রেজিস্ট্রি খাতায় প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত লিপিবদ্ধ করতে হবে এ সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও প্রদান করছেন তারা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওষুধ তত্ত্ববধায়ক সাবরিনা ইয়াছমিন জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা মোট এক লাখ ২৩ হাজার ৭শ’ ২টি। তন্মধ্যে রাজধানীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা সাড়ে ১১হাজার। সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যা ৮ হাজার ৬শ’৮৯টি ও ঢাকায় এ সংখ্যা ১হাজার ৪শ’৮৫টি।

তবে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে সঠিক তথ্য নেই। সারাদেশে আড়াই থেকে তিন লাখ ওষুধের ফার্মেসি রয়েছে। এগুলোতে ন্যুনতম প্রশিক্ষণ (সি গ্রেডের) রয়েছে এমন ফার্মাসস্টিও নেই।

অভিযোগ রয়েছে এসব ফার্মেসির অধিকাংশেই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধসহ উক্ত অধিদফতরের অনুমোদনহীন হাজারো ওষুধ বিক্রি হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন অভিযানে এ অভিযোগের সত্যতা মেলে। কতিপয় ওষুধই শুধুমাত্র চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা যায়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর ওষুধ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও সব ধরনের ওষুধ অবাধে হাটবাজারের ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ওষুধের নিবন্ধন খাতা চালুর উদ্যোগ নেয় অধিদফতর। ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক সৈকত কুমার কর জানান, তারা গত কয়েকমাস যাবৎ ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের আশেপাশের ফার্মেসিতে নিবন্ধন খাতা চালুর ব্যাপারে মালিকদের উদ্ধুদ্ধ করছেন।

তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফার্মেসিস্টদের কোনো তাপমাত্রায় কোন ধরনের ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে এ ব্যাপারে হাতে কলমে জানাচ্ছেন। এছাড়া কোন ওষুধ, কোন ব্যাচের, কতগুলো আছে, এ সব ওষুধের কোনগুলো কোন রোগীর কাছে, কোন ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে, কতগুলো বিক্রি করা হলো তা লিপিবদ্ধ করতে বলছেন। আপাতত তারা অ্যান্টিবায়োটিকের নিবন্ধন করার কথা বলছেন। এ প্রক্রিয়ায় ওষুধের অপব্যবহার বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ফার্মেসির লাইসেন্স দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার নির্দেশে গত কয়েকমাস যাবৎ নতুন করে লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রয়েছে। নকল, ভেজাল, নিম্নমাণ ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

কয়েকমাস আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বৈঠকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১ দেশের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে অস্ত্রোপচার ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা দুরূহ হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (আঞ্চলিক পরিচালক) ড. পুণম ক্ষেত্রপাল সিং।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অবস্থাকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ব যুগ’এর সঙ্গে তুলনা করেছে। একই সঙ্গে এ অবস্থাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে ওষুধের যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানোর পর বাংলাদেশ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে।