তিন দশকে মাত্র ৫৪ হাজার শ্রমিক রফতানি

তিন দশকে মাত্র ৫৪ হাজার শ্রমিক রফতানি

একমাত্র সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেল
জাতীয় ডেক্স : কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত তিন দশকে মাত্র ৫৪ হাজার শ্রমিক বিদেশ পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বিদেশে কর্মী নিয়োগকারী একমাত্র সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)।  যা এক বছরে কোনো বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির পাঠানো শ্রমিক সংখ্যার চেয়েও কম।

১৯৮৩ সালে বিদেশে ৪২ জন কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে পেশাদার, দক্ষ ও আধাদক্ষ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ২৭টি দেশে কর্মী পাঠিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমানে জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাহরাইন, ওমান ও মালদ্বীপ- এই পাঁচটি দেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এদের মধ্যে জর্ডান ও বাহরাইনে মহিলা শ্রমিক, দক্ষিণ কোয়িরা ও ওমানে দক্ষ, আধাদক্ষ পুরুষ শ্রমিক আর মালদ্বীপে কেবল পেশাজীবী (ডাক্তার) পাঠাচ্ছে বোয়েসেল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর কর্মকর্তাদের অপেশাদার মনোভাব এ প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ দিনেও এগুতে দেয়নি। অথচ স্বল্প খরচে বিদেশ যাওয়ার জন্য এ প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই।

বোয়েসেল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৮৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ৫৩ হাজার নয়শ’ ৫৫ জন বাংলাদেশি কর্মীকে বিদেশে পাঠাতে পেরেছে বোয়েসেল। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ২০ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বোয়েসেলের প্রথম ২৭ বছরের পরিসংখ্যান আটকে ছিল মাত্র ১৭ হাজার পাঁচশ’ ৭১ জনে। ২০১০ সালের পর থেকে বোয়েসেল তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক পাঠাতে সক্ষম হয়। আর এতেই সুখের ঢেকুর তুলছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

তবে জনশক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোয়েসেলের কর্মকাণ্ড মোটেই সন্তোষজনক নয়। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিও প্রতিষ্ঠানটির উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বোয়েসেল কর্মী পাঠানোর জন্য সরকারের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হলেও সরকার জনশক্তি. কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে শ্রমিক রফতানি করছে। অথচ বিএমইটির প্রধান কাজ জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া মনিটরিং করা। আবার জিটুজি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সময়ও উপেক্ষা করা হয় বোয়েসেলকে। যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোয়েসেলের প্রাধান্য পাওয়ার কথা সেখানে এ প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়েই করা হয়েছে সকল কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বোয়েসেল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হলেও নিজস্ব আয় থেকে এর সব ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। বিদেশগামী কর্মীদের থেকে নেওয়া  সার্ভিস চার্জই তাদের আয়ের উৎস। তা থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য সব ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। এছাড়া প্রতিবছরই সরকারকে লভ্যাংশ এবং অর্জিত আয়ের রাজস্ব আদায় করতে হয়।

আবার জনবল নিয়োগসহ নতুন বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথাও শোনা যায় কর্মকর্তাদের কণ্ঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বোয়েসেল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রামে ৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা উল্লেখ করা থাকলেও বর্তমানে আছেন ৪৮ জন। জরুরি ভিত্তিতে লোকবল চাওয়া হলেও তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকে দীর্ঘদিন।

ওই কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশে সরকারে প্রথম লিমিটেড কোম্পানি হল বোয়েসেল। যারা ৫১ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করার পর থেকে আজ অবধি দেওয়া ছাড়া সরকারের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেয়নি। ডেভিডেন্ট বাবদ এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। একটু নজর দিলেই প্রতিষ্ঠানটি আরো বড় হতে পারে। কিন্তু সেদিকে নজর দেওয়ার যেন কেউই নেই।

এসব ব্যাপারে বোয়েসেলের জেনারেল ম্যানেজার ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বোয়েসেলকে ব্যর্থ বলা যাবে না। কারণ, অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের হাত পা অনেকটাই বাঁধা। শ্রমিকের চাহিদার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সরকার এবং বিভিন্ন দূতাবাসের উপর নির্ভরশীল। আমরা বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মত ভিসা কিনতে পারি না। এর ফলে তাদের মত চাহিদা আমাদের কাছে আসে না। আবার নতুন বাজার খোঁজার জন্য যে পরিমান চেষ্টা-তদবির করা প্রয়োজন সেটাও আমরা করি না। কারণ, এজন্য নানা জটিলতা পোহাতে হয়। বিশেষ করে সরকারের অনুমতি পেতে হয়। যা পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর যখন অনুমতি পাওয়া যায় ততদিনে ওই দেশের চাহিদা আর থাকে না।

তবে তিনি বলেন, শুরুর দিকের বোয়েসেলের তুলনায় বর্তমান বোয়েসেল অনেক সফল। কারণ, শেষ পাঁচ বছরে আমরা যতো শ্রমিক পাঠিয়েছি তা প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ২৭ বছরে পাঠানো কর্মীর দ্বিগুণ। আশা করছি শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা আরো বাড়ানো সম্ভব হবে।

এদিকে বোয়েসেলের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, নতুন শ্রম বাজার খোঁজার অনুমতি চাইলে বোয়েসেলকে অপেক্ষা করানো হয়-এ অভিযোগ সত্য নয়। তাদেরকে বাজার খুঁজে শ্রমিক পাঠাতে হবে। এ বিষয়ে তারা যখনই অনুমতি চাইবে তখনই দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আমি সাক্ষাত করেছি। তারা যে কর্মযজ্ঞ দেখিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। বোয়েসেলকে কার্যকর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য তাদের কাছে ৬ মাসের কর্মপরিকল্পনাও চেয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটিতে গতিশীল করা সম্ভব হবে।