বিলুপ্ত হলো ছিটমহল, যন্ত্রণার জীবনের অবসান

বিলুপ্ত হলো ছিটমহল, যন্ত্রণার জীবনের অবসান

জাতীয় ডেক্স : আজ শনিবার ১ আগস্ট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে রচিত হলো নতুন এক ইতিহাস। দীর্ঘ ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে উঠে গেল ছিটমহল। এখন আর তারা বিচ্ছিন্ন কোনো ভূখণ্ডের নয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক। বাংলাদেশ-ভারতের মূল ভূখণ্ডে মিশে গেছে ১৬২ ছিটমহল। শুক্রবার মধ্যরাতের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের নাম হয়ে যায় ‘বাংলাদেশ' আর সেখানকার নাগরিকদের পরিচয় হয় বাংলাদেশি৷

ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও লীন হয়ে যায় ভারতে, সেখানকার নাগরিকরা হয় ভারতীয়৷

বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে দুই দেশের হাই-কমিশনাররা বৃহস্পতিবারই তেজগাঁওয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে ৩০টি গুচ্ছ মানচিত্রে সই করেন৷

এর মাধ্যমে কেবল মুহুরির চরের দুই কিলোমিটার এলাকা ছাড়া দুই দেশের মধ্যে ১ হাজার ১৪৪টি মানচিত্রে সই হয়৷ ২০১৬ সালের ৩০শে জুনের মধ্যে নতুন করে চিহ্নিত এ সব সীমান্তে সীমানা পিলার বসানোর কথা৷

বিলুপ্ত হলো ছিটমহল, যন্ত্রণার জীবনের অবসান
ঢাকায় পাওয়া খবরে জানা গেছে, দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই-কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী গুচ্ছ মানচিত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘এর মধ্যে দিয়ে সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে৷'' অন্যদিকে ভারতীয় হাই-কমিশনার পঙ্কজ শরণ একে উল্লেখ করেছেন ‘এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত' হিসেবে৷

শনিবার চার জেলায় আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী আনন্দ আয়োজন, ওড়ানো হবে জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশের মানচিত্রের পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভূখণ্ডের পরিমাণ বাড়লো এবং বাড়লো নাগরিকের সংখ্যাও৷

 বাংলাদেশের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নিলফামারী – এই চার জেলায় ভারতের ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ৭ হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহল ছিল৷

এ ছিটমহলগুলোতে ২০১১ সালে একটি যৌথজরিপ চালানো হয় এবং ১৬২টি ছিটমহলে ৫১ হাজার ৫৪৯ অধিবাসীকে চিহ্নিত করা হয়৷ এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ভারতীয় বাংলাদেশে অবস্থিত ছিটমহলগুলোতে বাস করছিল এবং ১৪ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশি ভারতের ছিটমহলগুলোতে বাস করছিল৷

যুগ যুগ ধরে যে ক্ষণটির প্রতীক্ষায় ছিল এই ভূখণ্ডের মানুষেরা সেই শুভমুহূর্তটি রাত ১২টার বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো। এ নিয়ে শুক্রবার দিনভার চলে বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস। গভীর রাত পর্যন্ত চলে নানা আনুষ্ঠানিকতা।

বিলুপ্ত হলো ছিটমহল, যন্ত্রণার জীবনের অবসান
১৯৪৭ সালের দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর থেকে বঞ্চিত থাকে ছিটমহলের অধিবাসীরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সমস্যাটি থেকে যায়। মুজিব-ইন্দিরার স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ৬৮ বছরের শোষন-বঞ্চনার ইতিহাসের অবসান ঘটতে যাচ্ছে ছিটমহলবাসীর। তাই দিনটিকে দেখছে তারা অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসার দিন হিসেবে।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ঢাকাটাইমসকে জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে দুই দেশের সব ছিটমহলগুলোতে মুসলিম বাড়িগুলোতে ৬৮টি করে মোমবাতি ও হিন্দু বাড়িগুলোতে ৬৮টি করে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এছাড়া ছিটমহলের প্রতিটি অন্ধকার সড়কে মশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করা হয়।

তিনি আরো জানান, ছিটমহল বিনিময়ের পরপরই একযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়।

সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের সভাপতি ময়নুল হক বলেন, আজকের দিন ছিটমহলবাসীর উল্লাস আর উচ্ছ্বাস প্রকাশের দিন। স্থানীয়রা দিনব্যাপী বিভিন্ন খেলাধূলা, গান-বাজনা, খণ্ড-খণ্ড নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পটকা ফোটানো ও আতশবাজির আয়োজন করেছে।

 এ ছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর ছিটমহলের মসজিদে-মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও মন্দিরে-মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারত অংশের সভাপতি দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ঢাকাটাইমসকে বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছরের পুঞ্জীভূত কষ্ট ও নাগরিকত্ব জীবনের যন্ত্রণার অবসানের প্রতীক হিসেবে দুই দেশের ছিটমহলবাসী অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এ দিনটি হবে ছিটমহলবাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিন ও উৎসবের রাত।

ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হলে প্রতিবছরই দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য ছিটমহলবাসীরা নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলে সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে।