অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের লক্ষ্য শিরোপা জয়

অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের লক্ষ্য শিরোপা জয়

স্পোর্টস ডেক্স : কাঁপা গলায় যেন কথাই বলতে পারছিলেন না মাশুক মিয়া জনি। তাতে কি, খেলা তো আর মুখের কথায় হবে না। মাঠে দেখাতে হবে পারফরম্যান্স। এক কথায় যে লক্ষ্যটা বলেছেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে চাই।’

নেপাল গমনের আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রস্তুতি ও লক্ষ্য নিয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের অধিনায়ক হিসেবে তরুণ মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া জনির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। হঠাৎ গুরু দায়িত্ব পেয়ে অনেকটাই নির্বাক হয়ে গেছেন জনি।

কথা তো বলতে পারেননি ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমানও। তবে মাঠে ক্রিকেটের ভাষায় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যুব ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়ত দল নিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ সেভাবেই দিতে চাইছেন। তেমন লক্ষ্য নিয়েই মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে নেপাল যাত্রা করছে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দল।

প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু বর্ণনা করেছেন দলের সামগ্রিক অবস্থান। প্রায় দুই মাসের প্রস্তুতি ক্যাম্পে যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন। দলের ফুটবলারদের মূলত তিনটি জায়গা থেকে বাছাই করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একাডেমি ও পেশাদার লিগ খেলা ফুটবলারদের থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। চূড়ান্ত দলে রয়েছেন পেশাদার লিগের ৯ ফুটবলার। একাদশে যে তাদেরই প্রাধান্য থাকবে স্বীকার করেছেন সাইফুল বারী টিটুও। জানিয়েছেন, একাদশে অন্তত ৮ জন আসবে বি লিগে খেলাদের থেকেই।

দীর্ঘ সময় ক্যাম্প হলেও বিভিন্ন ক্লাবে খেলা ফুটবলারদের খুব স্বল্প সময়ের জন্যই পেয়েছেন কোচ সাইফুল বারী টিটু। এমনকি রবিবার পর্যন্ত নিজ দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের হয়ে খেলেছেন অধিনায়ক মাশুক মিয়া জনি। ইব্রাহিম, মান্নাফ রাব্বিদের অবস্থাও তাই। বিকেএসপি ও একাডেমির ফুটবলাররা ক্যাম্পে রয়েছেন। তাই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা ফুটবলারদের নিয়ে দল গঠনে কম্বিনেশনে সমস্যা হতে পারে।

এ বিষয়ে টিটু বলেছেন, ‘আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। ফ্রি কিক, কর্নার, পাসিং সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সবার মধ্যে যাতে বোঝাপড়া থাকে, সেভাবেই ছেলেদের প্রস্তুত করতে চেষ্টা করেছি। আশা করছি সমস্যা হবে না।’

যুব ফুটবল দলের যাত্রার দিনেই অনূর্ধ্ব-১৬ দল সাফে শিরোপার জন্য লড়বে ভারতের বিপক্ষে। সিলেট স্টেডিয়ামে চলমান টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছে কিশোর ফুটবলাররা। কিশোরদের পারফরম্যান্স চাপ হতে পারে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য। আবার ভাল করার প্রেরণাও যোগাতে পারে। কোচ ও অধিনায়ক উভয়েই এটিকে প্রেরণার জায়গা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

টিটু বলেছেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৬ দলের পারফরম্যান্সটাই আমাদের এই দলের জন্য মোটিভেশনের জায়গায় কাজ করবে। উৎসাহ যোগাবে এই দলকেও ভাল কিছু করতে। তবে আমি মনে করি না কিশোররা ভাল করায় বড়দের উপর চাপ পড়বে। বরং বড়রা এটিকে উৎসাহের জায়গা হিসেবে পাবে।’

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অবস্থান ‘এ’ গ্রুপে। যেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে ভুটান ও নেপালকে। ২২ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ভুটানের বিপক্ষে। আর ২৪ আগস্ট স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে লাল-সবুজের দল। এক ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। অবশ্য সাইফুল বারী টিটু এগুতে চাইছেন ম্যাচ বাই ম্যাচ লক্ষ্য নিয়ে।

তিনি বলেছেন, ‘ভুটানের বিপক্ষে খেলার আগে নেপাল-ভুটান ম্যাচ দেখার সুযোগ পাব। সেখান থেকে উভয় দলকে কিছুটা মূল্যায়ন করতে পারব। তবে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। প্রথম ম্যাচ যেহেতু ভুটানের বিপক্ষে তাই আপাতত সেই ম্যাচ কিভাবে জেতা যায় তা নিয়েই কাজ করছি। তবে আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের জন্যই খেলব।’

বাংলাদেশের চূড়ান্ত লক্ষ্য শিরোপা জয়। সেই দিকটিকে সামনে রেখেই দলকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছেন সাইফুল বারী টিটু। খেলেছেন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও। বাংলাদেশ আর্মির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সোমবার আবাহনী লিমিটেডের বিকল্প টিমের সঙ্গে খেলে ১-১ গোলে ড্র করেছে। এই দুটি ম্যাচে যেসব দুর্বলতা ধরা পড়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন কোচিং স্টাফরা। দলের ফরম্যাশনটা ৪-৩-৩ ই রাখতে চাইছেন। সেভাবেই কাজ করেছেন। তবে প্রয়োজনে ৪-৪-২ ফরম্যাশনে খেলতেও দলের সদস্যদের কৌশলগত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নেপাল গমনের আগে সাইফুল বারী টিটু বলেছেন, ‘আমরা এখানে টেকনিক্যাল, টেকটিক্যাল, ফিজিক্যাল ও মেন্টাল সবগুলো দিক নিয়েই কাজ করেছি। আবহাওয়ার কারণে আমরা সেভাবে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারিনি। যেটুকু খেলেছি এর মধ্যেই নিজেদের দুর্বলতাগুলো দেখে কাজ করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমরা এখন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলছি তাই সাফ অঞ্চলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা উচিৎ। দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের ফুটবলের মান কাছাকাছি। আমি কাউকে খাট করে দেখছি না। তবুও সামগ্রিক অবস্থান বিবেচনায় আমরা শিরোপার জন্যই লড়ব।’

অনূর্ধ্ব-১৯ দলটি এবার একেবারেই নতুন। অভিজ্ঞতা বলতে বি লিগে খেলাটাই। অধিনায়ক মাশুক মিয়া জনিরও এর আগে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার সুযোগ হয়নি। তারুণ্যনির্ভর দলনেতা অবশ্য এসব নিয়ে ভাবছেন না। তিনি চোখ রাখছেন শিরোপাতেই। জনি বলেছেন, ‘আশা করছি এই টিম ভাল করবে। দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছি। সাফে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সহ-সভাপতি তাবিথ আওয়াল, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যানেজার আ ন ম আমিনুল হক মামুন ও সহকারী কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: সালাহউদ্দিন, অনিক হোসেন, মাসুদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাব্বির হোসেন সুমন, মো. ইমন, টুটুল হোসেন বাদশা,মান্নাফ রাব্বি, রাকিব সরকার, ফয়সাল আহমেদ, মো. মিঠু,শাহরিয়ার বাপ্পি, আনিসুর রহমান, ইমরান হোসেন রুবেল, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইশতেখারুল আলম শাকিল, বিপলু আহমেদ, মো. রকি, শফিউল ইসলাম খান, মাশুক মিয়া জনি (অধিনায়ক), মাহফুজ হাসান প্রিতম, রোহিত সরকার ও রহমত মিয়া।