টিসিবি’র পণ্য যাচ্ছে ‘কালোবাজারে’

টিসিবি’র পণ্য যাচ্ছে ‘কালোবাজারে’

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যের খোলাবাজারের পণ্য চোরাকারবারিদের মাধ্যমে যাচ্ছে কালোবাজারে। টিসিবি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, কর্মকর্তা ও ডিলারদের যোগসাজশে টিসিবির পণ্য ভোক্তারা না পেয়ে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। খোলাবাজারে সমসময় পণ্য সংকটের কথাই শোনা যায়।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারের বিপুল পরিমাণ পণ্য চোরাকারবারি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের গোডাউন থেকে উদ্ধার করেছেন। এরপর টিসিবির পণ্য নিয়ে ভোক্তাদের আগ্রহও কমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রমজান শুরুর ৮ দিন আগে থেকে চিনি, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের তালিকা নিয়ে বিক্রি শুরু করার কথা থাকলেও সব পণ্য ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করতে পারেনি টিসিবি।

বিপুল পরিমাণ খেজুর আমদানির মাধ্যমে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণের কথা থাকলেও রমজানের প্রথম এক সপ্তাহ সব ডিলার ভোক্তাদের কাছে খেজুরই দিতে পারেনি টিসিবি।

টিসিবি সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে প্রতিটি খোলাবাজারের ট্রাকে ৫০ বস্তা করে খেজুর দেয়া হবে।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে টিসিবির ডিলার সংখ্যা ২৮২টি। তবে রজমান উপলক্ষে রাজধানীতে মাত্র ২৫টি স্থানে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি।

সরেজমিনে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে, দুপুর ১২টার মধ্যে মসুর ডাল শেষ। খেজুরের চিহ্ন মাত্র নেই। লাইনে দাঁড়িয়েও শেষমেশ মিলছে না তেল। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্য দিনের মধ্যভাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ভোক্তা ক্রেতাদের অভিযোগ, যৎসামান্য পণ্য নিয়ে টিসিবির ডিলাররা আসে। ক্রেতার তুলনায় তা অত্যন্ত কম।

মিরপুর-১২ নম্বর, খামারবাড়ি ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরেও দেখা গেছে প্রায় একই রকম চিত্র। আগারগাঁও মোড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা আবু তালহা নামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, ‘এদের কাজ কারবার দেখে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। পণ্য তালিকায় ৫টার কথা বলে বিক্রি করছে দুই তিনটা পণ্য।’

তবে টিসিবি কর্মকর্তাদের দাবি, ভোক্তাদের বেশি অভিযোগ খেজুর নিয়ে। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে শুক্র-শনিবার খোলাবাজারে খেজুর বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহররম আলী মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ডিবির একটি টিম কালোবাজারি চক্র নির্মূলে কাজ করছেন। একটি সিন্ডিকেট টিসিবির কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে অসাধু ডিলারদের মোটা অঙ্কের লাভের আশা দেখিয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি না করে টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রি করছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সম্প্রতি একটি বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৯৯৬ লিটার তেল, চিনি ২৬৫০ কেজি, ছোলা ৩৫০ কেজি ও ৮০ কেজি খেজুর উদ্ধার করা হয়।

কাফরুলের রজনীগন্ধা মার্কেটের একটি গোডাউন থেকে এসব মালামাল উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মো. মামুন, জাহেদুল ইসলাম ও কামাল আহমেদ নামে তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাফরুলে রিনা ট্রেডার্স নামে আরো একটি গোডাউন থেকে ৪০ বস্তা চিনি উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি না করে যে সিন্ডিকেটটি বাইরে বিক্রি করছে তাদের মূল হোতা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরো জানান, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ অহরহ। তবে এ অভিযানের পর অপতৎপরতা কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, কিছু অসাধু ডিলার বেশি টাকা লাভের আশায় খোলা বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। টিসিবির সাথে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মত পণ্য সরবরাহ করছে না। যে কারণে সংকটের অভিযোগ আসছে।

তিনি আরো জানান, যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তাদের ডিলারশিপ বাতিলের চিন্তা করছে টিসিবি।