৩০ ইউনিয়ন প্লাবিত! ৪ দিনের ভারী বর্ষণে ১১ জনের মৃত্যু!

৩০ ইউনিয়ন প্লাবিত! ৪ দিনের ভারী বর্ষণে ১১ জনের মৃত্যু!

জাতীয় ডেক্স : কক্সবাজারে গত ৪ দিন ধরে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৩০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাহাড় ধস ও পানিতে ভেসে এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, বাকঁখালী নদী ও রেজু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষেরা রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির।

নিহতদের মধ্যে কক্সবাজার শহরে পাহাড় ধসে ৫ জন ও পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে সদর উপজেলায় ১ জন, রামুতে ৩ জন ও চকরিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়।

কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের উপসহকারী আবহাওয়াবিদ এ.কে.এম নাজমুল হক জানান, শনিবার থেকে মঙ্গলাবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪৪৫ মিলিমিটার। এর মধ্যে শনিবার ১১৬ মিলিমিটার, রোববার ২০২ মিলিমিটার, সোমবার ৮৭ মিলিমিটার ও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

তিন আরও জানান, ২৯ ও ৩০ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের কারণে অতিরিক্ত পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

এদিকে, টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলার ৩০ ইউনিয়নে দেখা দিয়ে জলাবদ্ধতা। কক্সবাজারের প্রধান ৩টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। এ ছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলার নিন্মাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড় ধস, পানিতে ভেসে গিয়ে ১১ জন মৃত্যু হওয়ার তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে একটি করে তদারকি কমিটি, মেডিকেল টিম রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলা ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

Coxbazar-1জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, রামু উপজেলার ১১ ইউনিয়ন, চকরিয়ার ১০ ইউনিয়ন ও পেকুয়ার ৫ ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বসতঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে না পেরে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন এখানকার পানিবন্দি মানুষগুলো। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢলে ভেসে ও পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, রামু উপজেলার বাকঁখালী নদী ও রেজু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত। দ্বিতীয় দফায় পানিতে প্লাবিত হয়ে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের। তাই রামু উপজেলাকে বণ্যাদূর্গত এলাকা ঘোষণা করে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দরকার বলে জানালেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘রামু উপজেলার পানিবন্ধি মানুষ ঘুমহীন না খেয়ে আছেন। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটও’।

চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, চকরিয়া সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার ইউনিয়ন। তার ইউনিয়নের শতভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ছে। ত্রাণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার ১০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের প্রয়োজন।