পোশাক-পরিচ্ছদে ইসলামের বিধিবিধান

পোশাক-পরিচ্ছদে ইসলামের বিধিবিধান

পোশাক-পরিচ্ছদে ইসলামের বিধিবিধান

পোশাক সৌজন্যের পরিচায়ক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া চাই। জুতসই, মানানসই পোশাক পরিধানই ইসলামের দাবি। হাদিস শরিফে এসেছে

ধর্ম

ধর্ম ডেস্ক

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা  রয়েছে। 

পোশাক মানুষের মৌলিক চাহিদা। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। তদ্রূপ শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ ও বাইরের ধুলোবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা একটি প্রয়োজনীয় আবরণ। তাই পোশাক আল্লাহ তাআলার নেয়ামত।

পোশাক ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সভ্যতা ও লজ্জাশীলতার পরিচায়ক। মানুষ পোশাক পরিধানের তাগিদ অনুভব করেছিল সেই আদিম আমলেই। আদিম থেকে আধুনিক—সব যুগেই আছে পোশাকের কদর। হোক না তা গাছের পাতা কিংবা সুতায় বোনা কাপড়। তাই লাজুকতায় বশীভূত হয়ে লজ্জাস্থান ঢাকার প্রবণতা প্রাকৃতিক। 

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় লেবাস ও পোশাক বলা হয়, যা মানুষের সতর ঢেকে দেয়, লজ্জাস্থানকে আবৃত করে ফেলে। ফিকাহশাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘রদ্দুল মুহতারে’ বলা হয়েছে, ‘পোশাক তাকেই বলা হয়, যা লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে।’ ন্যূনতম এতটুকু পরিমাণ পোশাক পরিধান করা ফরজ। কোরআনের ভাষ্য থেকেও পোশাকের এ সংজ্ঞা বোঝা যায়। কোরআন বলছে, ‘এ পোশাক তোমাদের লজ্জাস্থান আচ্ছাদিত করে ফেলে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)

ইসলামী পোশাকের বৈশিষ্ট্য

ইসলাম মানুষের জন্য যে পোশাক মনোনীত করেছে, তার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামসম্মত পোশাক বলতে সেই পোশাককে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান আবৃতকারী, মানানসই, সাদৃশ্যবর্জিত, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, বিলাসিতা বিবর্জিত, অহংকারমুক্ত, পরিচ্ছন্ন এবং (পুরুষের বেলায়) সেটি লাল, জাফরান, উসফুর (এক ধরনের গুল্ম, যা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়) ও ওর্স (এক ধরনের রঙের গাছ) ইত্যাদি রঙের হতে পারবে না।

ইসলামসম্মত পোশাকের জন্য কিছু রূপরেখা রয়েছে।

১. পোশাকটি সতর আবৃতকারী হতে হবে। সতর আবৃতকারী পোশাক বলতে বোঝায়, যে পোশাক সতরের অঙ্গগুলো পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। কাপড় এমন মসৃণ ও পাতলা হতে পারবে না, যাতে পোশাকের অভ্যন্তরের অঙ্গ দেখা যায়। কাপড় ঢিলাঢালা হওয়া উচিত। শর্টকাট, আঁটসাঁট পোশাক বিবস্ত্রতার নামান্তর।

২. পোশাক শালীন, সৌজন্যের পরিচায়ক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া চাই। জুতসই, মানানসই পোশাক পরিধানই ইসলামের দাবি। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৯১)

এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমার শখ হলো, আমার কাপড় উন্নতমানের হোক, আমার জুতা জোড়া অভিজাত হোক—এটা কি অহংকারপ্রসূত? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন (সৌন্দর্যের প্রকাশ অহংকার নয়)। ওই ব্যক্তি অহংকারী, যে সত্যের সামনে ঔদ্ধত্য দেখায় আর মানুষদের তুচ্ছজ্ঞান করে, অবজ্ঞা করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৭)

৩. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অন্যের সাদৃশ্য বর্জন করা। তিনটি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণ করা যাবে না। ২. ফাসেক-পাপাচারীদের মতো পোশাক পরিধান করা যাবে না। ৩. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক ধারণ করা যাবে না। অর্থাৎ পুরুষের জন্য নারীদের মতো আর নারীদের জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা জায়েজ নয়।

৪. রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না। এ বিধান পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। নারীদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭২০)

৫. পোশাকটি লাল রঙের হতে পারবে না। এটি মাকরুহ। তবে হালকা লাল রঙের পোশাক পরিধান করা বৈধ। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৫৮, কাশফুল বারি : কিতাবুল লেবাস : ২০৯)

৬. পোশাক জাফরান, উসফুর ও ওরস রঙের হতে পারবে না। উসফুর এক ধরনের হলুদ রঙের ফুল, যা পানিতে মিশ্রিত করে কাপড় রঙিন করা হয়। আরবে এর প্রচলন ছিল। ওরসও একটি ফুলের নাম, যা কাপড় রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এমন পোশাক পরিধানের নিষেধাজ্ঞাও শুধু পুরুষদের জন্য।

৭. বিলাসিতা পরিহার করতে হবে। সীমাতিরিক্ত বিলাসিতার গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া কাফিরদের অভ্যাস। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন: ‘বিলাসিতা পরিহার করো। আল্লাহর নেক বান্দারা বিলাসী জীবন যাপন করে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২১০৫)

৮. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অপচয় ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এ বিষয়ে উদাসীনতা কাম্য নয়। কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যখন তোমরা মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশক বস্তু (পোশাক) নিয়ে এসো। আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

৯. অপচয় যেমন নিন্দনীয়, কৃপণতাও অনুরূপ নিন্দনীয়, বর্জনীয়। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও সামর্থ্য অনুসারে পোশাক পরিধান করা উচিত। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ বান্দাকে যে নিয়ামত দিয়ে সিক্ত করেছেন, তার প্রভাব-প্রতিরূপ তিনি বান্দার মধ্যে দেখতে ভালোবাসেন।’

এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে উপস্থিত হন। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কি অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি নেই?’ সাহাবি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে তো আল্লাহ অঢেল সম্পত্তি দান করেছেন।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তোমার শরীরে দৃশ্যমান হওয়া উচিত।’ (তাবারানি কাবির : ১৯/৯৭৯)

১০. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা। বিশেষত, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। এক ব্যক্তির মাথায় অগোছালো ও এলোকেশ দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই ব্যক্তি কি কোনো কিছু (তেল ইত্যাদি) খুঁজে পায় না, যা তার চুলগুলোকে জমিয়ে রাখে, গুছিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে?’

ময়লাযুক্ত কাপড় পরিহিত অন্য একজনকে দেখে তিনি বলেছেন : ‘তার কী কিছু নেই, যা দিয়ে সে নিজের কাপড়চোপড় ধুয়ে নিতে পারে?’

আরো পড়ুন:

জুমার দিনের আদব

জুমার নামাজ না পড়লে যেসব শাস্তি অনিবার্য

জুমার দিন দোয়া কবুলের সেরা সময়

সন্তানদের যে আমলের অভ্যাস করানো জরুরি

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/religion/135754/পোশাক-পরিচ্ছদে-ইসলামের-বিধিবিধান