মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান কি টিকে থাকতে পারবে?

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান কি টিকে থাকতে পারবে?

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : 

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান কি টিকে থাকতে পারবে?


ইরানের তেল খাতকে লক্ষ্য করে আমেরিকা আজ থেকে কঠোর অবরোধ আরোপ করতে যাচ্ছে।  ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন এ ষড়যন্ত্র করে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।’

 ইরান তেল রফতানির ওপর প্রচ-ভাবে নির্ভরশীল এবং নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বহাল হলে দেশটির অর্থনীতিতে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।  নতুন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যরত কোম্পানিগুলোকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

কিন্তু দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার ফলে এই কেম্পানিগুলোর আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে যা তাদের ঝুঁকি বাড়াবে।

আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার কারণ কী?

ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা এক বহুপাক্ষিক চুক্তিকে ভয়ঙ্কর হিসেবে আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শুরুর দিকে তা থেকে বেরিয়ে যান। ওই চুক্তির ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর সরাসরি নজরদারি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যার বিনিময়ে বিশাল পরিসরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ায় দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এক তরফাভাবে পুনরায় বহাল হচ্ছে।
এ ঘোষণা অন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ইরান থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার ঘটনা বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট এবং ইতোমধ্যে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কমে গেছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কাজ করবে?
এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের সঙ্গে কোনো দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে তাকেও নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে হবে। অর্থাৎ কেউ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করলে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

একই সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনও মার্কিন কোম্পানি ইরানে ব্যবসা করে এমন কোম্পানির সাথে ব্যবসা করলে তাকেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। আজ সোমবার থেকে ব্যাংকিং সেক্টরেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গত আগস্টে স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু এবং অটোমোবাইল সেক্টরসহ বেশকিছু শিল্প খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল।

আমেরিকা পরিষ্কারভাবে যেটি চাইছে তা হলো ইরানের সামগ্রিক তেল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে কিন্তু ৮টি দেশকে সাময়িক ছাড় হিসেবে সময় দিচ্ছে আমদানি কমিয়ে আনার জন্য। ইতালি, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই ৮ দেশের অন্তর্ভুক্ত, দি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর রিপোর্ট বলছে।

এ অবরোধ এড়ানোর উপায় হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে- যাতে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়, আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোরও শিকার হতে না হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের মতো স্পেশাল পারপোজ ভিহাইকেল বা এসপিভির মাধ্যমে ইরান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পাদন কো যাবে সরাসরি লেনদেন এড়িয়ে।

যখন ইরান ইউরোপীয় কোনো দেশে তেল রফতানি করবে যে দেশ তা নেবে সেই দেশের কোম্পানি এসপিভির মাধ্যমে দাম পরিশোধ করবে। ইরান তার পর সেই অর্থ ক্রেডিট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ থেকে এসপিভির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবে।

ইইউর এ পরিকল্পনা কার্যকর হলেও ইরান-সম্পর্কিত ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ অনেক কোম্পানির জন্যই খুব চড়া হবে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র গবেষক রিচার্ড নেপিউ বলেন, ইরানের অর্থনীতি সরাসরি মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু ইরানের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক অংশীদার নির্ভরশীল এবং ইরানের সাথে ব্যবসা করার ফলে আমেরিকায় তাদের অভিগমন ঝুঁকির মুখে পড়বে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে রফতানি শূন্যে আনতে জোর দিচ্ছে কিন্তু তেলের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে, এমনটাই মত বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট লুকাসের।

ইরানের তেল কেনার জন্য অনুমোদিত দেশগুলোর পাশাপাশি ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সমর্থন জটিল প্রমাণিত হতে পারে।

২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইরানের তেল শিল্পে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যার ফলে ইরানের রফতানি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

এতে সন্দেহ নেই যে রফতানি এখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে এটিও পরিষ্কার যে ইরান এবং তার অবশিষ্ট ব্যবসায়িক অংশীদাররা বাণিজ্য যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে।

ইরানীদের তেল বিক্রি করার সৃজনশীল উপায় খোঁজার জন্য বাধ্য করা হবে, পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার অধীনে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর ওপর নির্ভর করে।

ইউরোপীয় বিনিয়োগ হারিয়ে ফেললে সেই শূন্যতা পূরণ করতে, ইরান রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যোগাযোগ তৈরি করতে মনোযোগী হবে।

সূত্র : বিবিসি