সখীপুরে ছয় বীজাগার তিনটি বেদখল তিনটি পরিত্যক্ত

সখীপুরে ছয় বীজাগার তিনটি বেদখল তিনটি পরিত্যক্ত

জুয়েল রানা, সখীপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ছয়টি ইউনিয়নে কৃষিবিভাগের ছয়টি বীজাগার ৪২ বছর ধরে কোন কার্যক্রম না থাকায় তিনটি ভবন স্থানীয়রা দখল করে রেখেছে অন্য তিনটি ভবন পরিত্যক্ত অবস্থা
য় পড়ে আছে। কৃষকদের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার সুবিধার্থে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার জন্য ওইসব জমিতে ভবন নির্মানের পরিকল্পনা করছে কৃষি অধিদপ্তর। কিন্ত সখীপুরের তিনটি ভবন ও জমি স্থানীয়দের দখলে থাকায় সরকারের এ পরিকল্পনা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্খা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ওইসব বীজাগার ঘুরে দেখা যায়, ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকারের প্রতিটি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০ শতাংশ জমি নিয়ে টিনশেড পাকা ভবন নির্মান করে ইউনিয়ন বীজগার হিসাবে কৃষি বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়। ১৯৭৬ সালে সখীপুর থানা ঘোষনা হলে সখীপুর বাজারে কোন পাকা ভবন না থাকায় গজারিয়া ইউনিয়নের বীজাগারের ভবনটি থানা-পুলিশ ব্যবহার শুরু করে। ছয় বছর পর সখীপুর থানা ওই ভবনটি ছেড়ে দিলে স্থানীয়রা আবার ওই ভবনটি দখল নেয়। ১৯৮৯ সালে ওই ভবনে ডিগ্রী অনার্স মাস্টারস স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডিঅমস) নামের ওই সংগঠন দখল করে। ২০০০ সালে সখীপুর পৌরসভা স্থাপিত হলে ওই ভবনটি পৌরসভার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বছর তিনেক পর পৌরসভা অন্যত্র চলে গেলে আবার ডিঅমস দখলে নেয়। বর্তমানে ডিঅমস ছাড়াও আরো কয়েকটি সংগঠন ওই ভবনের কক্ষ দখল করে আছে। জমির এক অংশ জেলা পরিষদের অর্থায়নে সখীপুর বাজারের দোতলা গণশৌচাগার নির্মান করা হয়েছে। এছাড়াও বীজাগারের বাকি জমিতে স্থানীয়রা অস্থায়ী চা স্টল ও হোটেল স্থাপন করে তা ভাড়া দিয়েছেন। সখীপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি তাহেরুল ইসলাম ইয়ারুম তালুকদার বলেন, বাজারের লোকজনের সুবিধার্থে সরকার একটি গণশৌচাগার করেছেন। কার জমিতে করেছেন সরকারই ভালো জানেন। এদিকে যাদবপুর ইউনিয়নের বীজাগারটি ওই ইউনিয়নের কালিদাস বাজারে স্থাপিত হয়। কালিদাস কলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় হিসাবে ওই ভবনটি ব্যবহার করে। পরে দশ বছর পর ওই ভবন পরিত্যক্ত হলে ভবনটি বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়। পরে আস্তে আস্তে ভবনটি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বর্তমানে ওই ভবনের জমি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক একেএম সাইফুল্লাহ বলেন, সরকার ফেরত চাইলে ওই জমি আমরা যে কোন সময় ছেড়ে দেব। এদিকে বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বীজাগারের ভবনটি বহেড়াতৈল বাজারে নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালের পর ওই ভবনটি কৃষি বিভাগ ব্যবহার না করায় বহেড়াতৈল বাজারের ব্যবসায়ীরা ওই ভবনটি দখল করে। আনুমানিক ১০ বছর ধরে ওই ভবন ভেঙ্গে পড়ায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বহেড়াতৈল ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবি ভূঁইয়া জানান, বর্তমানে কৃষি বিভাগের ওই পরিত্যক্ত বীজাগারের জমিতে বাজারের লোকজনের ব্যবহারের জন্য গণশৌচাগার নির্মিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য গোলাম ফেরদৌস কৃষি বিভাগের জমিতে গণশৌচাগার নির্মিত হয়নি দাবি করে বলেন, কৃষি বিভাগের ২০ শতাংশ জমি ওই শৌচাগার ঘেঁষেই রয়েছে। হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তক্তারচালা বাজারের ওই বীজাগারটির ভবন ব্যবহার না হওয়ায় আস্তে আস্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাঁর পরিষদের পাশেই ওই জমির অবস্থান। তবে ওই জমিতে কোন ভবনের লেশ মাত্র নেই। কাকড়াজান ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পারভীন আক্তার বলেন, বৈলারপুর গ্রামে বীজাগারের ভবন থাকলেও সেটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কালিয়া ইউনিয়নরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার মিয়া ও হাবিবুর রহমান বলেন, বড়চওনা বাজারের মাঝখানে মূল্যবান জমিতে ওই বীজাগারের ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই ভবনটি কাগজে কলমে আমাদের দুইজনের নামে আবাসিক ভবন হিসাবে বরাদ্দ থাকায় প্রতিমাসের বেতন থেকে ওই ভবনের জন্য বাসা ভাড়া বাবদ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তিনটি বীজাগারের জমি ও ভবন স্থানীয়রা দখলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কৃষি বিভাগ এখন ডিজিটাল। কৃষকদের দোরগোড়ায় আধুনিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটি ইউনিয়ন কমপ্লেক্্ের দুইটি করে কক্ষ কৃষি কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন ওই কর্মকর্তাদের আবাসিক সুবিধা দিতে সরকার প্রতিটি ইউনিয়নের বীজাগারের জমিতে ভবন করার পরিকল্পনা করছে। সখীপুরের গজারিয়া, যাদবপুর ও বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বীজাগারের জমি স্থানীয়রা দখলে রেখেছেন। শিগগিরই ওইসব জমি ও ভবন কৃষি বিভাগের দখলে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ চলছে।