তাজউদ্দীন আহমদ: পরিণত সমাজভাবনা ও রাষ্ট্রচিন্তার অধিকারী

তাজউদ্দীন আহমদ: পরিণত সমাজভাবনা ও রাষ্ট্রচিন্তার অধিকারী

টাঙ্গাইল দর্পণ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিচালক। তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন পরিণত সমাজভাবনা ও রাষ্ট্রচিন্তার অধিকারী। আপামর জনসাধারণের একান্ত প্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
পরিণত সমাজভাবনা ও রাষ্ট্রচিন্তা- এই দুইয়ের যোগফল খুব কম নেতার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। পড়াশোনায় তার গভীর আগ্রহ ছিল। এ বিদ্যানুরাগী কেবল ভালো ছাত্র হওয়ার জন্যে পড়াশোনা করেননি, বরং তার শিক্ষার্জন ছিল মানুষ ও পৃথিবীকে জানার ও বোঝার অভিপ্রায়। আপামর জনসাধারণ ছিল তার একান্ত প্রিয়।
তাজউদ্দীন আহমদ ভালো ছাত্র ছিলেন। ম্যাট্রিক ও আই এ পাশ করেছিলেন মেধা তালিকায় স্থান লাভ করে। কিন্তু সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করায় তার পক্ষে যথাসময়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ডিগ্রি নিয়েছিলেন। কিন্তু এম এ পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি এল এল বি পড়েছিলেন। জেলখানা থেকে পরীক্ষা দিয়ে আইনের ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। স্কুলে থাকতেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি যখন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিল সদস্য হয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স কুড়ি বছর হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে, সাম্প্রদায়িকতা ও সুশাসনের প্রশ্নে তিনি মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।
পাকিস্তানের সংবিধান বিষয়ক মূলনীতি কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে ১৯৫০ সালে ঢাকায় যে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তিনি ছিলেন তার আয়োজকদের একজন। এই সম্মেলনে পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাম ইউনাইটেড সোশালিস্ট স্টেট্স্ অব পাকিস্তান বলে প্রস্তাবিত হয়; অর্থাৎ দেশের কাঠামো হবে যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রদেশগুলো ভোগ করবে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, আর এর আর্থিক রূপ হবে সমাজতান্ত্রিক।
প্রদেশের একমাত্র অসাম্প্রদায়িক অরাজনৈতিক সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের তিনি একজন নেতা ছিলেন। তিনি যখন যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন লাভ করে বিপুল ভোট পেয়ে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বার বার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘকাল তিনি কারাগারে কাটান।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করেন। এদেশের নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম আক্রমণের পরে তিনি সহকর্মী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান এবং ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।
বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন গঠন, আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদসমূহের প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক শক্তির পুনর্বিন্যাস, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা, পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করে বাঙালি কূটনীতিকদের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণায় উৎসাহদান, ভারত সরকারের সঙ্গে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষাসহ বহু ক্ষেত্রে তাকে এককভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতেই দলের ভেতর ও বাইরে থেকে তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে তার অনমনীয় মনোভাবের অনেক ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনের নীতিগত বিষয়ে কিছু কিছু মতান্তর দেখা দেয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা এই সুযোগে তাদের দুজনের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। তাজউদ্দীন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু তার এই ইচ্ছা গোপন থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন এবং সেই সঙ্গে পদত্যাগপত্রের খসড়াও পাঠিয়ে দেন। তাতে তাদের দুজনেরই ক্ষতি হয়, সর্বোপরি ক্ষতি হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরে খুনিরা তাজউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার একজন বাদে আর সকল সদস্য কারাগারের অভ্যন্তরে নিহত হন।

সুত্রঃ http://banglanewspost.com

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel