কৃষি, প্রকৌশল, মেডিকেল শিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঝোঁক

কৃষি, প্রকৌশল, মেডিকেল শিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঝোঁক


শিক্ষাঙ্গণ ডেক্স :

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন স্তরে প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঝোঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’ (ইউজিসি) এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুধু উচ্চ শিক্ষা স্তরেই দুই হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষার গুণগত মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় বলে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন,বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা, প্রকৌশল শিক্ষা এবং মেডিকেল শিক্ষার উপর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঝোঁক বেশি।

ইউজিসির ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ১১১ জন। তবে গত বছর এবং চলতি বছর এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করে ইউজিসি। উচ্চ শিক্ষায় ২০১৫ সালে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, চীন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, পোল্যান্ড, ক্যামেরুন,মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া,নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইটালি, জাপান,লাইবেরিয়া,তানজানিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, জিম্বাবুয়ে, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও নেদারল্যান্ডসহ মোট ৩৬টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এসেছেন।

২০১৫ সালে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৯৩ জন। পক্ষান্তরে ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৪৩২, ২০১৩ সালে ৩২৬ জন, ২০১২ সালে ৫২৫ জন, ২০১১ সালে ২১০ জন, ২০১০ সালে ৩৫৯ জন এবং ২০০৯ সালে শিক্ষার্থী ছিলো ৩৯০ জন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩৩টিতে ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫১৮ জন। যার মধ্যে সর্বাধিক ৯৫৫ জন ভর্তি হয় চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। এর পরপরই অবস্থান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (১৪০ জন)। এছাড়া চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১ জন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ৮৩ জন, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় ৭২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী।

অবশ্য আগের বছরের তুলনায় ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সামান্য কমেছে বিদেশি ছাত্রের সংখ্যা। ২০১৪ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৪৩ জন।

এছাড়া ২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৬১২ জন, ২০১২ সালে ১ হাজার ৬৪২ জন, ২০১১ সালে ১ হাজার ৬৫১ জন, ২০১০ সালে ১ হাজার ৫৫৭ জন, ২০০৯ সালে ১ হাজার ১৯৯ জন, ২০০৮ সালে ৮১২ জন, ২০০৭ সালে ৫৯৬ জন, ২০০৬ সালে ৪৯৮ জন এবং ২০০৫ সালে ছিলো ৬৯৫ জন শিক্ষার্থী।

এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে নয়জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আরো ২০ জনের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো শিক্ষাবর্ষে একসঙ্গে এতো বেশি সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নজির এই প্রথম বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উচ্চ শিক্ষার গুণগতমানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলে বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর হার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি বর্হিবিশ্বে একদিকে যেমন বাংলাদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মান্নান বলেন, উচ্চ শিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করতে বলেছি। এজন্য যা সহযোগিতা প্রয়োজন দেবে মঞ্জরী কমিশন।

তথ্যসূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।