প্রতিশ্রুতিতে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী-নগর পিতা

প্রতিশ্রুতিতে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী-নগর পিতা


বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী : টাঙ্গাইল পৌরসভার তিনবার নির্বাচিত সফল নগরপিতা ও জেলা আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মোঃ জামিলুর রহমান মিরন।এবারের নির্বাচনের পূর্বে তিনি টাঙ্গাইল পৌরবাসীদের জন্য কোন নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তিনি নির্বাচনের পুর্বে নগরবাসীদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ‘আমি কোন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাই না। আমি বাস্তবায়নে বিশ্বাসী।’ অতি সম্প্রতি তিনি তৃতীয়বারে মত টাঙ্গাইল পৌরসভার নগরপিতা হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। সর্বস্তরের জনগণের জনপ্রিয় এই নগরপিতা টাঙ্গাইল শহরের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের সাথে। পুর্বে অনেক মেয়রই টাঙ্গাইল শহরকে মাদকমুক্ত করার অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের কথার সাথে কাজের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে আপনার এই বিষয়ে পদক্ষেপ গুলো কি কি? বর্তমানে শুধু টাঙ্গাইল শহরেই নয়, মাদক সারা দেশব্যাপী একটি বড় ধরনের হুমকি। আর এই হুমকির মুখ থেকে আমাদের তরুণদের রক্ষার জন্য দরকার সবার সার্বিক সহযোগিতা।একার পক্ষে আমাদের সমাজ থেকে এই হুমকি দূর করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমি সবার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বেছে নিয়েছি অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিকে। তার পাশাপাশি যারা এই মাদক তুলে দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মের হাতে তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের রুখতে আমি সব ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করছি।এরই মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আমরা বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছি এবং অভিযানগুলো সেই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যে পর্যন্ত আমরা সমাজ থেকে মাদকের মূল শিখর উপরে ফেলতে না পারছি।

টাঙ্গাইল শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
টাঙ্গাইল শহরে যানজট আছে কিন্তু এটাকে ঘিঞ্জি বলা যাবে না। কারণ আমি এর আগেও এই শহরের মেয়র হিসেবে জনগণের সেবা করেছি। আর শহরটিকে আমি যতটা সম্ভব যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। তবে সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বিগত পাঁচ বছরে এই শহরে যানজট হয়তো বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমি মেয়র নির্বাচিত হবার পর পরই শহরের যানজট প্রবণ এলাকাগুলোকে নজরে রেখেছি। আমার মনে হয় যানজটের সবচেয়ে বড় একটি কারণ হচ্ছে, শহরের গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী উঠানামা করা। আর এ জন্য আমি সেই সকল স্থানে সাইন বোর্ড দিয়ে চালকদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছি এবং সেই সাথে প্রয়োজনে চালকদের জরিমানার ব্যবস্থা করেছি।এছাড়াও আরো বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ আমাদের হাতে আছে, প্রয়োজনে সেগুলো প্রয়োগেও আমি পিছ পা হব না। তবু আমার শহরকে কেউ যানজট পূর্ণ শহর বলবে, এটা আমি মেনে নেব না।

শহরের রাস্তাঘাট ও সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি?
বিগত কয়েক বছর এই শহরে কোন প্রকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। এটা যদিও খুব লজ্জাজনক। তবে আমি বর্তমান মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এই লজ্জা কাটিয়ে ওঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার প্রমাণ হয়তো নগরবাসী পেয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন স্থানের রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু বর্ষা চলে এসেছে, তাই আমি এখন শহরের জলাবদ্ধতা নিরসণের ক্ষেত্রেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দুর করার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে শহরের সব এলাকাগুলোতেই আমি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে হাত দেব। এবারে আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমার হাতে গোছানো এই টাঙ্গাইল শহরকে পেয়েছি খুবই অপরিকল্পিত অবস্থায়। তাই এই শহরকে পরিচ্ছন্ন তথা গুছিয়ে নিতে আমার একটু সময় লাগবে।
 ইভটিজিং ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধ রোধে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি?
এগুলো হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়। এই ধরনের সামাজিক অপরাধ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে পরিবার। আর তাই আমার চিন্তা-ভাবনা আছে সুশীল সমাজ ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে কাজ করার। এছাড়া এই ধরনের সামাজিক অবক্ষয় আমার নগরে তেমন বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ আমার নগরবাসী জানে কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়।

ভুমিদস্যুদের হাত থেকে এই শহরকে নিরাপদ রাখতে আপনার পদক্ষেপ কি?
এই বিষয়ে আমি অতীতের মতই শক্ত অবস্থানে আছি। যদিও ভূমি দখলের প্রবণতা আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। আমি বেশ কিছু সরকারি জমির তালিকা হাতে পেয়েছি, যে জমিগুলো এখনও ভুমিদস্যুদের কবলে। অতি শীঘ্রই জমিগুলো উদ্ধার করার জন্য আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। 

বিগত দুই-দুইবার আপনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আর এবার সরকার দলীয়ভাবে হলেন। সেক্ষেত্রে নগর উন্নয়নে কি ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পরবে বলে আপনার মনে হয়?

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এবার সরকার দলীয় ভাবে নির্বাচিত হয়ে নগর উন্নয়নে ও জনগণের সেবায় আমি আর কোন বাঁধা রাখিনি। আর এর ইতিবাচক দিকগুলো খুব অল্পদিনেই আমার নগরবাসী বুঝতে পারবে বলে আমি আশা করছি।

নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনি কোন শহরকে রোড ম্যাপ হিসেবে নিয়ে কাজ করবেন?
বিগত কয়েক বছর এই শহরকে রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুন অনেক গ্লানি পোহাতে হয়েছে। আমার মনে হয় আমার শহরটি এখন খুবই ক্লান্ত।  আমার সর্বপ্রথম কাজ হল এই ক্লান্তির হাত থেকে শহরটিকে রক্ষা করা। রোড ম্যাপ তো থাকবেই, এটা সব শহরেরই থাকে। তবে আমি চাই ভবিষ্যতে যেন এই টাঙ্গাইল পৌরসভাকেই সবাই আদর্শ রোড ম্যাপ হিসেবে চিনতে পারে। আর আমি সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আগেই বলেছি, আমি প্রতিশ্রুতিতে নয়,বাস্তবায়নে বিশ্বাসী।