মানিকগঞ্জে দুই মামা খুনে ভাগিনার শ্বশুর গ্রেপ্তার

মানিকগঞ্জে দুই মামা খুনে ভাগিনার শ্বশুর গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিবেদক : আর্থিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্ধল গ্রামে ভাগিনাদের হাতে দুই মামা খুনের ঘটনায় জহির উদ্দিন (৬৫) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার রাতে গোবিন্ধল তালপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি গোবিন্ধল গ্রামের মৃত শামেজ উদ্দিনের ছেলে এবং নিহতদের ভাগিনা রশিদের শ্বশুর।

এর আগে রবিবার সকালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওই গ্রামের মৃত রহিম মোল্লার ছেলে আজিজ মোল্লা (৫৫) ও দিরগজ মোল্লার ছেলে টেনডল মোল্লাকে (৫০) তাদের ভাগিনা জাহিদুল ইসলাম (৪৫), রশিদ হোসেন (৩৮) ও জসিম উদ্দিনের (৩০) নেতৃত্বে সহযোগিরা নিজ ঘরে আটকিয়ে লাঠি, বল্লম ও ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন।

এ ঘটনায় সন্ধ্যায় সিংগাইর থানায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন আজিজের স্ত্রী ফরিদা বেগম।

নিহতদের চাচাতো ভাই বেলায়েত হোসেন জানান, বাহরাইনে টেনডলের বোন হাসিনা ও আরেক বোনের ছেলে রশিদ একই সঙ্গে থাকতেন। পাঁচ মাস আগে বাহরাইনে হাসিনা মারা গেলে সেখানে দাফন করা হয়।

এই হাসিনা নিঃসন্তান থাকায় তার প্রায় ২৮ লাখ টাকা ও নিজ গ্রামে কেনা ৩৬ শতাংশ জমি রশিদ, জাহিদুল ও জসিমরা হাতিয়ে নেয়। এই আর্থিক ও সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে টেনডলের সঙ্গে ভাগিনাদের বিরোধের সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে এ নিয়ে ভাগিনাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন টেনডল। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টেনডলকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়ার রায় দেয়া হয়।

কিন্তু টেনডল তা মানেননি। এই বিরোধের জের ধরে মামাদের সঙ্গে ভাগিনাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় টেনডলকে ভাগিনারা হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে আজিজ, টেনডল ও তার ভাই করিম মোল্লা (৪০) পাশে ভাগিনাদের বাড়ি যায়।

এ সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জাহিদুল, জসিম, রশিদ ও তাদের বাবা শামসুল ইসলাম, মা রাজিয়াসহ সহযোগিরা তাদের ঘরের ভেতর আটকিয়ে রেখে লাঠি, বল্লম ও ধারালো দা দিয়ে কোপায়।

এ খবর পেয়ে টেনডলের স্ত্রী কমেলা বেগম (৪০), ছেলে আল-আমিন (১৩), শ্যালক রমজান হোসেন (২৮) ও আলমগীর হোসেন (৩০) ওই বাড়িতে গেলে তাদেরও ওপর হামলা করেন তারা।

এতে ঘটনাস্থলেই আজিজ ও টেনডল নিহত হন। আর করিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অন্যদের ঘোনাপাড়াস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করে স্বজনরা।

সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনরা দুই জনের লাশ গ্রহণ করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছে। সন্ধ্যায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশের ছয়টি দল পৃথকভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযানে নেমেছে।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে জহিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আর ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনও করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।