মধুটিলায় নববধূকে বিবস্ত্র : স্বামীসহ ৫ বখাটের কারাদণ্ড

মধুটিলায় নববধূকে বিবস্ত্র : স্বামীসহ ৫ বখাটের কারাদণ্ড

টাঙ্গাইলদর্পণডটকম : শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কে নববধূর শ্লীলতাহানির চাঞ্চল্যকর মামলায় ৫ বখাটের ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইদুর রহমান খান এ সাজার রায় ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত জরিমানার অর্থ ঘটনার ভিকটিম ও মামলার বাদী ওই নববধূকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের আদেশ দিয়েছেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলের, নালিতাবাড়ী উপজেলার পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামের মৃত হাসমত আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল (২৬), সমশ্চুড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), একই গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আ. ছালাম (২৫) ও মতিউর রহমানের ছেলে মনু মিয়া (২৬) এবং নকলার নারায়ণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ওই নববধূর স্বামী নজরুল ইসলাম বুলবুল (২৮)।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ওই নববধূ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমারে যারা অসম্মান করছে, ইজ্জত হরণের চেষ্টা করছে, আল্লায় ওগরে বিচার করছে। ওরা মানুষ না, ওরা পশু। বিচার পেয়ে আমি খুশী।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। আসামিদের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, আমাদের সে চেষ্টা ছিল। আমরা রায়ে খুশী।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী হরিদাস সাহা স্বপন বলেন, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুলাই নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক নববধূকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই নববধূর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেয়ে বখাটেরা মোবাইলে ব্লু টুথ ও ইন্টারনেটে সেই অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ওই নববধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে স্বামী নজরুল ইসলাম বুলবুলসহ ৫ বখাটেকে আসামি করে নালিতাবাড়ী থানায় দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় ওই নববধূ স্বামীর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন। চাঞ্চল্যকর এ যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তদন্ত শেষ করে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর ১০/৩০ ধারায় ওই ৫ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। পর্নোগ্রাফি মামলাটির আসামি পলাতক থাকায় বিচারের প্রস্ততি চলছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ইজারাদার প্রতিনিধি নালিতাবাড়ী উপজেলার পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামের মৃত হাসমত আলীর ছেলে মোস্তফা কামালের কাছে মোটরসাইকেল রেখে বুলবুল স্ত্রীকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাঝামাঝি স্থানে বসে গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সমশ্চুড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের বখাটে ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭) একই গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আ. ছালাম (২৫) ও মতিউর রহমানের ছেলে মনু মিয়া (২৬) ওই স্থানে গিয়ে স্বামী বুলবুলের কাছ থেকে নববধূকে টেনে-হিঁচড়ে পাশের টিলাবেষ্টিত জঙ্গলে নিয়ে যায়। এসময় ফিল্মি কায়দায় ৩ বখাটে ছুঁড়ি দেখিয়ে স্বামীর সামনেই মেয়েটিকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি তোলার পাশাপাশি যৌন হয়রানি করতে থাকে। নববধূ নিজেকে বাঁচানোর জন্য স্বামীকে জাপটে ধরে। কিন্তু স্বামী বখাটের হাতে স্ত্রীকে সোপর্দ করে তাদের সব আবদার মেনে নেয়। এক পর্যায়ে সম্ভ্রম বাঁচাতে ওই নববধূ টিলা থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় নিচে ঝাঁপ দিয়ে চিৎকার করলে এক মুরুব্বী এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় রেঞ্জ অফিসে পৌঁছে দেয়। ঘটনা জানাজানি হলে ৩ বখাটে চলে যায়। পরে স্বামী বুলবুল ওই ঘটনাটি কাউকে না জানানোর নির্দেশ দিয়ে স্ত্রীকে নালিতাবাড়ী শহরে রেখে সে নকলার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। পরদিন বখাটে শফিকুল তার সহযোগি মোস্তফা কামালকে ব্লু-টুথের মাধ্যমে ভিডিওটি মোবাইলে ‘ফরয়ার্ড’ করে। তাদের সহযোগি লিটন ভিডিওটি নিয়ে ২১ জুলাই ওই নববধূর বাড়িতে যায় এবং তার বোনের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এসময় লজ্জা ও ভয়ে ওই নববধূ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরে নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক মো. আরিফ হোসাইনকে নববধূর ভাই ঘটনাটি খুলে বলে। গত বছরের ১৩ আগস্ট ভিকটিম নববধূ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ ওই ঘটনায়  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দু’টি পৃথক মামলা গ্রহণ করে।

আদালতে ১৬৪ ধারায় শফিকুল জবানবন্দি দেয় ঘটনার সঙ্গে মোস্তফা, মনু, সালাম, বুলবুল ও লিটন জড়িত। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে আলামত উদ্ধার করে মোস্তফা, মনু ও বুলবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সালাম আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়। ঘটনার পর থেকে নাজমুল হাসান লিটন পলাতক রয়েছে।