গাড়ি আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ

গাড়ি আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ

অর্থনীতি ডেক্স :  দেশে গত ৫ বছরে গাড়ি আমদানি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত—৫ বছরে  এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৭৬ শতাংশ। তবে, জাতীয় সংসদের সদস্যেদের জন্য ট্যাক্স ফ্রি সুবিধায় আমদানিকৃত ও ডিপ্লোমেটদের ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত গাড়ি এ হিসেবের বাইরে রাখা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন ( বারভিডা) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৮৮টি। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ৮৬৪টি। এই ৫ বছরে দেশে গাড়ি আমদানি বৃদ্ধির পরিমাণ ৭ হাজার ২৭৬টি। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৭৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছর আমদানিকৃত গাড়ির পরিমাণ কমলেও তা ২০১৩-১৪ থেকে আবার বেড়েছে।

জানা গেছে, দেশে ২০১২-১৩ অর্থবছর গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৫৩টি। তবে, এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এ বছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ৪২৭টি। ২০১৪-১৫ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮৬৪টি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বারভিডার সভাপতি হামিদ শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, সম্প্রতি গাড়ি আমদানি বেড়েছে সত্য। কিন্তু  উচ্চ রাজস্বের কারণে গাড়ি আমদানি গত দশ বছর আগের তুলনায় কমেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩৩ হাজার ১৭৮টি। আর সদ্য সমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ৮৬৪টি। পরিমাণের দিক দিয়ে যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয় না বললেই চলে। উদাহরণ দিয়ে হামিদ শরীফ বলেন, জাপানে বর্তমানে টয়োটা কোম্পানির ল্যান্ডরোভার বা ল্যান্ডক্রুজার মডেলের গাড়ি সেদেশে চলে না বললে ভুল হবে না। আর যদিও চলে তা জাপানের প্রধান শহরের বাইরে, গ্রামগঞ্জে। ওই মডেলের গাড়ি সেদেশে বর্তমানে পুরনো হয়ে গেছে। অথচ আমাদের দেশে তা আধুনিক মডেলের দামি গাড়ি বলেই চেনে সবাই। কারণ, এই গাড়ি আমদানিতে সরকারকে রাজস্ব দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৮শ শতাংশ। সে হিসেবে ল্যান্ডক্রুজার মডেলের একটি গাড়ির দাম পড়ে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এ বিবেচনায় অত্যন্ত দামি গাড়ি বলে বিবেচিত হলেও এটি মোটেই আধুনিক বা বিলাসবহুল গাড়ি নয় বলে জানান তিনি। বিশ্বে আধুনিক ও বিলাসবহুল গাড়ি হিসেবে পরিচিত লিমুজিন ব্র্যান্ডের গাড়ি বাংলাদেশে চোখেই পড়ে না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরের রেকর্ডে দেশে গাড়ি আমদানি বাড়তে দেখা গেলেও উচ্চ রাজস্বের কারণে সম্প্রতি বছরগুলোয় আমদানি কমেছে। এ ছাড়া ইমকাম ট্যাক্সের ঝামেলা এড়াতেও আগের মতো এখন অনেকেই গাড়ি কিনতে চান না। জাতীয় সংসদের সদস্যরা  (এমপি) ট্যাক্স ফ্রি সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দূতাবাসের ডিপ্লোম্যাটদের জন্যও কিছু গাড়ি সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আমদানি করা হয়। এ সব গাড়িগুলোকেও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।

বারভিডার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানির পরিমাণ অত্যাধিক হারে বাড়লেও পরের বছরগুলোয় তা আবার কমেছে।  আলোচিত ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩৩ হাজার ১৭৮টি। ২০০৯-১০ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩২ হাজার ২২৫টি এবং ২০১০-১১ অর্থবছর দেশে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৮২৩টি।

গাড়ি আমদানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বন্দর ও রাজস্ব জটিলতায় গত কয়েকবছরে দেশে গাড়ি আমদানি কমলেও তা আবার বাড়তে শুরু করেছে, তবে তা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের মতো নয়। যানজট নিরসনে সরকারের কড়াকড়িতেও গাড়ি আমদানি অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।