টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১৫ বছর

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১৫ বছর

Decrease font Enlarge font
ঢাকা: টেস্ট ক্রিকেটে ১৫ বছর পূর্তি হলো বাংলাদেশের। ১৫ বছর আগে এই দিনে অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের হাত ধরে ক্রিকেটের মর্যাদার ফরম্যাটে অভিষেক হয় টাইগারদের।

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে প্রথম সাদা পোশাকের ক্রিকেট খেলতে নামেন বুলবুল-আকরাম-পাইলটরা। এর আগে ২০০০ সালের ২৬ জুন দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ইংল্যান্ডের লর্ডসে আইসিসির বোর্ড সভায় তৎকালীন সভাপতি ম্যালকম গ্রে ঘোষণা দেন আইসিসি বাংলাদেশকে পূর্ণ মর্যাদার টেস্ট সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

লর্ডসে আইসিসির সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। সভায় সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের সর্মথন পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালেই বিসিবি সভাপতি লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, ২০০০ সালের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করবে বাংলাদেশ!

স্বপ্নপূরণে দরকার ছিল আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপ খেলার টিকিট পাওয়া। ১৯৯৭ সালে মালোয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জেতে বাংলাদেশ। ওই বছর জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য আইসিসির কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের যথার্থতা প্রমাণ হয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার চেষ্টাকে গতি দেন ক্রিকেটাররা।

এরপর শুরুটা হয় স্বপ্নের মতো। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর নাঈমুর রহমানের অধিনায়কত্বে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে সাদা পোশাকে মাঠে নামে বাংলাদেশ।

আমিনুল ইসলামের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। অভিষেকেই ১৪৫ রান করে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান এবং জিম্বাবুয়ের ডেভিড হটনের পাশে নাম লেখান আমিনুল ইসলাম। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে ৯ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে অধিনায়ক নাইমুর রহমানের ৬ উইকেট অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে কোনো বোলারের সেরা বোলিং।

সেই শুরু; সময়ের পরিক্রমায় ১৫ বছরে ৯৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৭১টি ম্যাচেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১৫টি ড্র আর জয় ৭ ম্যাচে। পরিসংখ্যান বলে ওয়ানডে ক্রিকেটের সাফল্যের তুলনায় সেভাবে এগোয়েনি টেস্ট ক্রিকেট। এটি মানেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয়।

টেস্ট ফরম্যাটে ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেট অবকাঠামো সেভাবে গড়ে না ওঠাকে দায়ী করেন দুর্জয়। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট তো শুধু জাতীয় দলকে ঘিরে, কিন্তু  জাতীয় দলকে যে ক্রিকেটাররা সাপোর্ট দেবেন তারা তো উঠে আসবে ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো থেকে। এই জায়গাটায় আমাদের উন্নতি হয়নি। আমরা যে ধরনের উইকেটে খেলি সেগুলো মোটামুটি টেকনিক দিয়ে খেলা সম্ভব কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট খেলতে গেলে টেকনিক অনেক ভালো হতে হবে। এজন্য স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে। উইকেটে বৈচিত্র্য থাকলে ব্যাটসম্যান-বোলারদের টেকনিক ভালো হবে। টেকনিক ভালো না হলে কিন্ত আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে পারব না। আমরা এখন কাজ করি শুধু ওয়ানডে নিয়ে।’

দেশে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘একটা সমৃদ্ধ টেস্ট প্লেয়িং দেশে গেলেই বুঝতে পারবেন, ওদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, একজন প্লেয়ারকে যেভাবে মূল্যয়ন করা হয় সেটা এখানে করা হয় না। ওই ক্যাটাগরির মতো হয়েতো আমরা না। তবে লক্ষ্য তো থাকতে হবে। যাদের সঙ্গে টেস্ট খেলি তারা কিন্ত অনেক এগিয়ে। তাদের যদি ধরতে চাই তাহলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা ওদের চাইতে ভালো হতে হবে কিংবা সমকক্ষ হতে হবে।’

দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নাইমুর আরও বলেন, ‘উন্নতি করার এমনিতেই কোনো শেষ নেই। আমার মনে হয় দুর্বল জায়গাগুলোতে আরও বেশি উন্নতি দরকার। যারা লংর্গার ভাসনে ভালো করবে তারা সব ফরম্যাটেই ভালো করবে। ওয়ানডে ক্রিকেটের সাফল্যে খুশি হতে চাই। যেটা লংগার ভার্সন ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু না। আমরা যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি তাহলে লংগার ভার্সন ক্রিকেটের দিকেই নজর দিতে হবে।’
সৌজন্যে : বাংলানিউজ২৪ডটকম।