মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্প পাকিস্তান-আফগানিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫

মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্প পাকিস্তান-আফগানিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানে ২৫৩ জন ও আফগানিস্তানে ৮২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন হাজারোধিক লোক। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে এ ছয় দেশের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে।

স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৯ মিনিটে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের ফয়জাবাদ শহর থেকে ৭৩ কিলোমিটার উত্তরে হিন্দু কুশ পর্বত এলাকায় ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ২১৩ কিলোমিটার গভীরে। এটি প্রায় ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। এ ভূমিকম্পের পর ৪.৮ মাত্রার একটি পরাঘাতও অনুভূত হয় আফগানিস্তানে।

অবশ্য, ইউএসজিএস ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৫ বলে জানালেও পাকিস্তানের ভূতত্ত্ব জরিপ কেন্দ্র বলছে, ইসলামাবাদে ৮ দশমিক ১ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম দিকে আলাদা খবর দেয় ভারতীয় ও আফগান সংবাদমাধ্যমও।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পে দেশটিতে কমপক্ষে ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এরমধ্যে পেশোয়ার শহরসহ খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত উপজাতীয় এলাকাগুলোতে (ফাটা) নিহত হয়েছে ১২৩ জন। পাঞ্জাবে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আজাদ কাশ্মীরে নিহত হয়েছে একজন। আর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গিলজিত বালতিস্তানে। এছাড়া, আহত হয়েছে কমপক্ষে এক হাজার লোক। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ছাদ, ভবন ও ভূমিধসের কারণে। কিছু লোক হতাহত হয়েছে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে পদদলিত হয়েও।

ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর ছাদ থেকে লাফ দিতে গিয়েও অনেকের জখম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে খাইবার পাখতুনখওয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশে। ভূমিকম্পের পর ভূমিধসের খবরও পাওয়া গেছে।

আফগানিস্তানের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ভূমিকম্পে দেশটির ৮২ জন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এপি তাদের টুইটার বার্তায় জানায়, ভূমিকম্পে দেশটিতে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে তাখার প্রদেশের একটি গার্লস স্কুলে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হিন্দু কুশ পর্বতাঞ্চলে নিহত হয়েছে ৩৩ জন। এছাড়া, আহত হয়েছে কয়েকশ’ লোক। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরও ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পে কিছু লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এখনও কারও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। আহতদের মধ্যে সেনাসদস্যও রয়েছেন।

তবে, ভূমিকম্পের কারণে সড়কের আইল্যান্ডে ফাটল, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে যাওয়া এবং ভবন ও দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে তিনটি দেশেই।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পের পর ভারতের কাশ্মীর, পাকিস্তানের লাহোর-পেশোয়ার ও আফগানিস্তানের কাবুল এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় মোবাইল-ফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যায় দিল্লির মেট্রোরেল সার্ভিসও। আতঙ্কে কর্মস্থল ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ভারতের দিল্লিসহ উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহর, লাহোর, কাবুলসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এছাড়া, ভূমিকম্পে ভারতের এনডিটিভির নিউজরুমও কেঁপে ওঠে বলে সে মুহূর্তের একটি ভিডিও প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি।

ভূমিকম্পের পরপরই সরকারের নির্দেশনায় জরুরি উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দুর্গতদের সহায়তায় সর্বোচ্চ তৎপরতার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকেও প্রয়োজনে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন। আফগান সরকারের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ ভূমিকম্পের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, একইসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব তৎপরতা চালাতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

ভূমিকম্পের মাত্রা প্রাথমিকভাবে ৭ দশমিক ৭ বলে জানালেও পরে ইউএসজিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।

২০০৫ সালে পাকিস্তানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পে প্রায় ৮০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।