সংকটে জামায়াত : রাজপথে নামার সাহস হারিয়েছে নেতাকর্মীরা

সংকটে জামায়াত : রাজপথে নামার সাহস হারিয়েছে নেতাকর্মীরা

রাজনীতি ডেক্স : প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরে মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নেতাদের ‘রক্ষায়’অতীতের মতো এবারও রাজপথে নামতে পারছে না তারা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হলেও এর ‘প্রতিবাদে’কোনো কর্মসূচিই ঘোষণা করতে পারেনি দলটি। 

এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। বাধা এড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নামলে কোণঠাসা জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের আরো কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার রাস্তায় না থাকলে রয়েছে রাজনীতিতে গন্তব্য হারিয়ে ফেলার শঙ্কা। নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার পর দল হিসেবে নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।

দলের নেতারা জানান, সুফল আসবে না জেনেও অস্তিত্ব জানান দিতেই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। এর আগের যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজপথে সহিংসতা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ রয়েছে। দলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে রাজপথে থাকলেও শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করা যায়নি।

যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দেশে শরীক অন্য দলগুলোর সমর্থন পাচ্ছে না জামায়াত। প্রধান মিত্র বিএনপি এ ইস্যুতে পুরোপুরি নীরব। সাম্প্রতি প্রধান মিত্রের সঙ্গে  সম্পর্কের অবনতিও ঘটেছে। বিএনপিও মাঠের রাজনীতিতে ম্রিয়মান অবস্থায় রয়েছে। সব দিক থেকে সমর্থন হারিয়ে চরম প্রতিকূল অবস্থায় পড়েছে জামায়াত। এ অবস্থায় রাজপথে নামার সাহস হারিয়েছে দলের নেতাকর্মীরা।

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আগের সহিংস অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে জামায়াত। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াতের বর্তমান কৌশল হচ্ছে সীমিত আকারে আন্দোলনের মাধ্যমে শুধু অবস্থান জানান দেয়া। যেনো মাঠের রাজনীতিতে গরম বজায় থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই।

অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখতে শান্ত থেকে নেতাকর্মীদের সহিংসতার অভিযোগে মামলা থেকে নিরাপদ রাখা। নতুন কোনো সহিংসতার দায় কাঁধে না নেওয়া। সরকার যেনো নিষিদ্ধ করার যৌক্তিক কারণ দাঁড় করাতে না পারে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে এ বার্তাই দেওয়া হয়েছে।

দেশে-বিদেশে সব দিক থেকে চাপে আছে জামায়াত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও পরাশক্তি দেশের সঙ্গে একসময় সু-সম্পর্ক ছিল। যে সব নেতা এসব সম্পর্ক রক্ষা করতেন তারা কারাগারে অথবা নিষ্ক্রিয় থাকায় কূটনীতিক সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে দলের প্রচার বিভাগের সহাকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দলীয় কর্মসূচিও তার আলোকেই পালন করা হয়েছে।

তবে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবদিক থেকে চাপে থাকায় ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না জামায়াত। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিন দফায় নিষিদ্ধ হলেও কখনও এতটা কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়নি জামায়াতকে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও জেলার একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলেও রাজপথে সক্রিয় হতে পারছেন না নেতাকর্মীরা।