টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এডিপিইও’র বিরুদ্ধে  অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এডিপিইও’র বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

আব্দুল্লাহ্ আল মাসুদ :  টাঙ্গাইলে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) নিরঞ্জন কুমার রায় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, সরকারি আদেশ অমান্য ও জালিয়াতি করে প্রায় ১০ বছর ধরে জেলায় চাকুরি করছেন। তিনি এর আগে জেলার দেলদুয়ার, নাগরপুর ও ভুঞাপুর উপজেলায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মকর্ত ছিলেন। এই কর্মকর্তা সরকারি আদেশ লঙ্ঘন, আর্থিক ও নিয়োগ-বদলীতে অনিয়ম ও দূর্নীতি প্রমানের পরও এখনও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত রয়েছেন। দূর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তার কাজে জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ভয়ে ও আতঙ্কে থাকেন। এদিকে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য সংগ্রহ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করেছেন।

জানা গেছে, বর্তমান সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) নিরঞ্জন কুমার রায় জেলার দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩ (বি) ও ৩(ডি) উপধারায় একটি বিভাগীয় মামলা হয়। বিভাগীয় মামলায় নিরঞ্জন কুমার ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে অংশগ্রহন করেন। মামলায় বহুস্বাক্ষী গ্রহনের পর দূর্নীতি প্রমান হয়। এরপর তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হলে তিনি তার জবাব দেন। তার জবাব মতে মামলাটি সত্য প্রমানিত হলে প্রাগম/তঃশৃঃ/বিমা-৫৪/২০১০/৩৫৪, তারিখ-১০-১০-২০১০ এ বিভাগীয় মামলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও বর্তমানে সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিরঞ্জন কুমার রায়কে সরকারি কর্মচারি বিধিমালা, ১৯৮৫ এর ৪(২)(ই) উপবিধি মোতাবেক “বেতন স্কেলের অবনতিকরণ” লঘুদন্ড প্রদান করা হয়। এই প্রজ্ঞাপন অভিযুক্ত নিরঞ্জন এবং নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাকে লিখিত জানানো হয়। কিন্তু অভিযুক্ত নিরঞ্জন অর্থের বিনিমনে তাকে শাস্তির আদেশের সকল সরকারি জারিকরা প্রজ্ঞাপনের কপি গায়েব করে ফেলেন। এরপর সরকারি শাস্তির আদেশ ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে গত ১১ অক্টোবর ২০১০ থেকে পূর্বের মতো একই বেতনভাতা উত্তোলন শুরু করেন। চরম দূর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে শাস্তির সরকারি অভিযোগপত্র লুকিয়ে সে গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত বেতনভাতা তুলে যাচ্ছেন।

এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিরঞ্জন কুমার রায় ভুঞাপুরে বদলী হয়ে এসে এখানেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করেন। তিনি ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ভুঞাপুর উপজেলার নলুয়া রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে অবৈধভাবে পিয়ারা আক্তারকে নিয়োগ দেন। সরকারি নির্দেশে বলা হয়, ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখের পর কোন নিয়োগ বৈধ হবে না। কিন্তু সেসময় নিরঞ্জন কুমার অনেক টাকার উৎকোচের বিনিময়ে সরকারি আদেশ অমান্য, দূর্নীতি ও জালিয়াতি করে সহকারি শিক্ষক পদে অবৈধ্যভাবে পিয়ারা আক্তারকে চাকুরিতে নিয়োগ দেন। পরে এ নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠলে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে পিয়ারা আক্তারের নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়। চাকুরির জন্য দেয়া উৎকোচের টাকা নিরঞ্জনের কাছে চাইলে গেলে পিয়ারা আক্তারকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) নিরঞ্জন কুমার রায় বলেন, বিভাগীয় মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলেই আমি চাকুরিতে পদন্নতি পেয়েছি। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে আমার কোন হাত ছিল না। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনামুল হক জানান, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুনে পূর্বের কর্মস্থলগুলোতে দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। সে বিষয়গুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করেছি।