মানবপাচারে ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্তে মিলছে অনেক তথ্য

মানবপাচারে ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্তে মিলছে অনেক তথ্য

জাতীয় ডেক্স : মানবপাচারে ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। উপকূল এলাকার ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও স্থানীয় ক্ষমতাধর মহলের সংশ্লিষ্টতার খবর বেরিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের প্রতিবেদনে এসব ব্যক্তির নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট উল্লেখ করে। টেকনাফের আট ব্যাংকের শাখায় ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিএফআইইউ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর এসব ব্যক্তির নামের তালিকা পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ জানিয়েছে।

সন্দেহভাজনদের মধ্যে আছেন, কক্সবাজার ৪ (টেকনাফ-উখিয়া) এর সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। বদির নাম এর আগেও বেশ কিছু গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। মানবপাচার ও মাদক ব্যবসায় জড়িতদের যে তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ করেছিল, তাতেও তার নাম রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

আরও কিছু সরকার নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএফআইইউ সন্দেহজনক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এর আগে সরাসরি অর্থ লেনদেন করেছে। কিন্তু এখন তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। টেকনাফে বিভিন্ন ব্যাংকের আটটি শাখা রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো হল- সোনালী, অগ্রণী, জনতা, ইসলামী, আল-আরাফা ইসলামী এবং এবি ব্যাংক। এছাড়া কৃষি ব্যাংকের দুইটি শাখা আছে টেকনাফে।

বিএফআইইউ এসব শাখা পরিদর্শন করে কিছু অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পায়। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট এমপি বদির।

এছাড়া তদন্তকারীরা এবি ব্যাংকের দুইটি অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের খোঁজ পায়। এই দুইটি অ্যাকাউন্ট ফরিদ আহমেদ ও আমীরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির। পুলিশ সূত্রমতে, এরা দুইজনই মাদক ও মানবপাচারে দীর্ঘদিন জড়িত। তবে তদন্তকারীরা এদের উপার্জন ও ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য পায়নি।

বিএফআইইউ এর পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, 'এসব অ্যাকাউন্টের স্বত্বাধিকারীরা সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলেই আমাদের ধারণা।' তিনি আরও জানান, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত হচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান বলেন, 'আমরা মূলত মানবপাচার বিষয়ে কাজ করি না, তবে যদি অর্থ আত্মসাৎ বা জালিয়াতির কোনও অভিযোগ আসে, আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নেবো।আমরা প্রয়োজনে পুলিশ ও তদন্ত বিভাগকেও নিয়োগ করব।'

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মানবপাচারে জড়িত ১ হাজার ৩ শ' ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে। গত ২৬ মে দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তারও আগে আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা মাদক ব্যবসায় জড়িত ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা, বদি ও বদির পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষত টেকনাফ ও কক্সবাজার, এসব অপরাধে জড়িতদের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।

ব্যাপক পরিমাণ মানুষ কক্সবাজার দিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থের বিনিয়ময়ে পাচারকারী চক্রের কাছে তারা আসলে বিক্রি হয়ে যায়। অনেক সময় তাদের আটকে রেখে আত্মীয়-পরিজনদের কাছ থেকেও আদায় করা হয় মুক্তিপণ।