বাসাইলে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষে সাফল্য

বাসাইলে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষে সাফল্য

ডেক্স নিউজ : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধানই প্রধান ফসল। এর পাশাপাশি কৃষি জমিতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বহুমুখি ফসলের চাষাবাদ করে ব্যাপক সফলতা অর্জনের সম্ভাবনাময় দ্বার প্রান্তে বাসাইলের কৃষি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান চাষের পাশাপাশি কৃষকের একটুকরা জমিতে বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করছে চাষিরা। হরেক রকম সবজির দেশ বাংলাদেশ। 

এর মধ্যে কুমড়া জাতীয় সবজি অন্যতম। যেমন , লাউ, মিষ্টিকুমড়া চাল কুমড়া, শষা, করলা, ঝিঙা, পটল, ধুন্দল বেগুন, স্কোয়াশ, তরমুজ, বাঙ্গি, ঢেঁড়শ, খিড়া ইত্যাদি ছারাও লাল শাক, পুঁইশাক, পালান শাক, লাউ শাক, কলমি শাক ও পাট শাক । এসব সবজি চাষ এলাকায় দীর্ঘদিনের হলেও বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকরের আক্রমনে সফলাতার মুখ দেখেনি চাষিরা। কুমড়া জাতীয় সবজি আবাদে ব্যাপক ক্ষতিকর স্ত্রী মাছিপোকা তাদের লম্বা ওভিপজিটর বা শুল দ্বারা কচি ফলের ভিতর ডিম দেয়। এই ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতরের নরম কোষ-কলা ও মজ্জা খেতে থাকে। এদের আক্রমনে ফল পঁচে যায়,আর যে ফলটি বড় হয় তা খোড়া অবস্থায় । 

এই পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের বিষ স্প্রে করে থাকে। পোকার কীড়া ফলের ভিতরে থাকায় বিষাক্ত কীট নাশক দিয়েও এ পোকার আক্রমন রোধ করা সম্ভব হয়না। বরং ব্যাপক হারে কীটনাশক ব্যাবহাররে ফলে চাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জন স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসহ পরিবেশ বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশ কৃষি গভেষনা ইনস্টিটিউট বিষ মুক্ত সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ উদ্ভাবন করে যা কৃষকের কাছে যাদু ফাঁদ নামে পরিচিত। 


ইকো এগ্রো টেক বানিজ্যিক ভাবে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ কৃষকের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে বিপণনের ব্যবস্থা করছে। ফলে কৃষকরা স্বল্প খরচে এসব পোকার আক্রমন থেকে কুমড়া জাতীয় সবজি রক্ষা করতে পারছে সহজেই । সম্প্রতি এলাকার বিভিন্ন ডিলার ও কৃষিসম্প্রসারণ অফিসে সেক্স ফেরোমোন টোপ সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যাবহারে বাড়ছে বিষমুক্ত সুস্থ সবল সবজির উৎপাদন। ধান উৎপাদনের তুলনায় সবজি চাষে কৃষকরা ৫ গুন লাভ পাচ্ছে। বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। ফলে এ এলাকার কৃষকরা তাদের আবাদী জমিতে ধানের পাশাপাশি সবজিসহ বহুমুখি ফসল উৎপাদনের দিকে উৎসাহিত হচ্ছে । ইতমধ্যে উপজেলার অনেক চাষিই তাদের আংশিক জমিতে পরীক্ষা মূলকভাবে সবজি বাগানে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যাবহার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। 

এসব চাষিদের মধ্যে রয়েছে বাসাইল কলেজ পাড়ার মিস্টি কুমড়া চাষি লালটু মিয়া, আদাজানের বেগুন চাষি লতিফ ,আলমখান,জামাল খান, আব্দুল মালেক ,হাবলা বিলপাড়ার চালকুমড়া চাষি ফারুক মিয়া, দুলাল, নাহালীর চিচিঙ্গা চাষি সোহরাব দেওয়ান, নাকাছিমের খিড়া চাষি হাসেম বেগ, আইসড়ার লাউ ,করলা, ঢেঁড়শ ও বাঙি চাষি মাসুম, শামছুল হক, জাহিদ হাসমত , কাউলজানির ধুন্দল,ঢেরশ,চিচিঙ্গা ও শষা চাষি আলী মিয়া, সুলতান নুরু, নুর আলম, আলিম , সফিকুল । এছারাও এলাকার উল্লেখ যোগ্য চাষিরা ধান উৎপাদনে উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের মূল্য না পাওয়ায় সবজি চাষে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় এ চাষে ঝুকে পড়ছে বলে জানান তারা। 

সরেজমিন পরিদর্শন কালে চাষিরা বলেন, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদসহ আধুনিক কৃষি তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করে ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় একই জমিতে সবজি আবাদ করে ৪/৫ গুণ লাভ হয়। তাই শুধু ধানের উপর নির্ভর না করে বিকল্প হিসাবে বিষমুক্ত সবজি ফসল আবাদের ব্যাপক পরিকল্পনা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে এ চাষে এলাকাসহ দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। তারা বলেন আমাদের কৃষি অফিসার সহ উপ-সহকারী কর্মর্তাদের সু পরামর্শে সবজি চাষে ভাল লাভবান হচ্ছি। এব্যাপারে বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান,বাসাইলে কৃষিক্ষেত্রে শুধু ধান চাষের উপর নির্ভরশীল না হয়ে এর পাশাপাশি বিকল্প কৃষি উৎপাদনে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শাক-সবজিসহ অধিক লাভ জনক বহুমুখি ফসলের আবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে কজ করে যাচ্ছি আমরা। (আমারদেশ)