অলৌকিক’ ভাবে বেচে থাকা! মায়ের বাঁচার লড়াই

অলৌকিক’ ভাবে বেচে থাকা! মায়ের বাঁচার লড়াই

এএফপিজঙ্গলে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ মা ও শিশুকে খুঁজছিলেন রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবী আকিসক্লো রেনতারিয়া। আচানক তাঁদের দেখলেন একটি উপত্যকার পাশে। আট মাসের শিশুকে আঁকড়ে ঘুমিয়ে আছেন মা। রেনতারিয়াকে দেখামাত্র মা প্রথম বলে উঠলেন—হেল্প! হেল্প! পোড়া পা নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন। শিশুটিও কেঁদে উঠল।

গত শনিবার কলম্বিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় চালক নিহত হন। তবে নিখোঁজ ছিলেন ১৮ বছরের মা নেলি মুরিলো ও তাঁর আট মাসের শিশুপুত্র ইয়ুদিয়ের। পাঁচ দিন পর গত বুধবার জঙ্গল থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা সাড়া ফেলেছে স্থানীয় গণমাধ্যমে। ওই জঙ্গলে অক্ষত অবস্থায় মা ও শিশুর বেঁচে থাকাকে ‘অলৌকিক’ বলে মনে করছেন সবাই।
সাহস আর মনের জোরে এই কয়দিন শিশুকে নিয়ে বেঁচেছিলেন মা। মায়ের চেষ্টা ছিল একটাই—যেভাবেই হোক, বুকের ধনকে বাঁচাতে হবে। উড়োজাহাজটি ২২৫ কেজি মাছ ও নারকেল নিয়ে যাচ্ছিল। পাইলট ছাড়া সেখানে যাত্রী ছিলেন মা ও শিশুটি। যখন উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায় তখন দরজা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে দ্রুত মা নামেন। সন্তানকে পরনের কাপড় দিয়ে মুড়ে দেন। তাই তার গায়ে কোনো আঁচ লাগেনি। বলতে গেলে সে অনেকটাই অক্ষত। উড়োজাহাজের জ্বালানি গ্যাসে মা মুরিলোর পা ও গোড়ালি পুড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

আলতো বদুর জঙ্গলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। জায়গাটি কলম্বিয়ার নুকুই ও কিবদো শহরের মাঝামাঝি জায়গায়। আশপাশ নদী দিয়ে ঘেরা। চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। মা তার শিশুকে নিয়ে ওই জঙ্গলেই আশ্রয় নেন। নদীর পানি পান করে ও সঙ্গে থাকা কিছু খাবার খেয়ে টিকে ছিলেন মা। বুকের দুধ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন শিশুকে।কলম্বিয়ার জঙ্গলে

গতকাল বৃহস্পতিবার রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবী রেনতারিয়া এএফপিকে বলেন, দুর্ঘটনার পর বাচ্চা ও নিজেকে বাঁচাতে সবরকমের চেষ্টাই করেন মুরিলো। বিপদে বুদ্ধি হারাননি তিনি। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে বের হওয়ার পর মা দেখেন, শিশুটির শরীর অনেক গরম হয়ে গেছে। তিনি কাছের একটি জলাশয়ের পানি দিয়ে তার শরীর ঠান্ডা করেন। যখন উড়োজাহাজ থেকে ধোঁয়া বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন মা শিশুকে নিয়ে আবার ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি নারকেল ও নারকেল কাটার দা নেন। এ সময় মা নিজের ও উড়োজাহাজের চালকের মোবাইল ফোন খুঁজে পান। মোবাইল ফোন পেয়ে আশার আলো দেখেন মা। কিন্তু আবার তাঁকে হতাশ হতে হয়। কারণ একটি ফোনের ব্যাটারির চার্জ ছিল না।উদ্ধারের পর মা নেলি মুরিলো। ছবি: এএফপি

মা মুরিলো এরপর কাছাকাছি কোথাও গিয়ে সাহায্য চাওয়ার কথা ভাবেন। বনের মধ্যে স্থানীয় খনি শ্রমিকদের সাহায্য তিনি পেতে পারেন। এই ভেবেই শিশুকে বুকে নিয়ে বনের দিকে পা বাড়ান মা। রেনতারিয়াকে পরে অবশ্য মুরিলো বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে যাওয়াই তাঁর ভুল ছিল। কিন্তু যখন দেখলেন যে উড়োজাহাজের চালক নিহত হয়েছেন তখন ভয় পেয়ে গেলেন।

রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবী বলেন, বন থেকে কলম্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের শহর কিবদোতে নিয়ে আসার পুরো সময়টাই তাঁর কোলে ঘুমিয়ে ছিল শিশুটি। উদ্ধারের সময় শিশুটির শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। এ সময় নিজের শার্টে মুড়ে তাকে গরম করেন রেনতারিয়া। মায়ের কোল থেকে নেওয়ার সময় কেঁদে ওঠে শিশুটি। স্যালাইন পান করানোর পর সে ঘুমিয়ে পড়ে।

মা ও শিশুকে মেডেলিন শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উদ্ধারকর্মী রেনতারিয়াকে ত্রাণকর্তা ভাবছেন মা। তাঁকে শিশুটির গডফাদার ভাবছেন তিনি।

কলম্বিয়ার বিমানবাহিনীর কমান্ডার কর্নেল হেক্টর কারাসকেল বলেন, এটি অলৌকিক ঘটনা। সাহস আর বুদ্ধির জোরেই শিশুকে নিয়ে বেঁচে গেছেন মা। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ। এএফপি অবলম্বনে